অনকোলজি

img

ব্রেস্ট ক্যান্সার

ব্রেস্ট ক্যান্সার সৃষ্টি হয় স্তন কোষের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধির ফলে। অতিরিক্ত কোষ বিভাজনের মাধ্যমে টিউমার বা মাংস পিণ্ড তৈরি হয় যা রক্ত এবং লসিকার মাধ্যমে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে।

কারণ

ব্রেস্ট ক্যান্সারে প্রধানত আক্রান্ত হয়ে থাকেন মহিলা রা, কিন্তু মহিলা ছাড়াও পুরুষ দেরও ব্রেস্ট ক্যান্সার হতে পারে তবে তার সম্ভাবনা খুবই কম। ব্রেস্ট ক্যান্সারের বেশ কিছু কারণ রয়েছে যার মধ্যে প্রধান হলো জীবনযাত্রা। বর্তমানের অসাস্থ্যকর জীবনযাত্রা স্তন ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ। এছাড়াও পরিবারের কারোর স্তন ক্যান্সারের ইতিহাস থাকলে সেটি ও পরবর্তীকালে ক্যান্সারের সম্ভাবনা তৈরি করে। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো সচেতনতার অভাব। অনেকেই এখনো লজ্জা এবং ভয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে চান না, বা সমস্যা থাকলেও স্বীকার করেন না, ফলে রোগ টি সহজে ছড়িয়ে পড়ে।

লক্ষণ

  • 1.স্তনে পিণ্ড বা চাকা দেখা যাওয়া
  • 2.স্তনে অস্বাভাবিক ভাবে রস, রক্ত বা পুঁজ দেখা যাওয়া
  • 3.স্তনের চামড়ার রঙের এবং আকারের আকস্মিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা

 

এই লক্ষণ গুলি চোখে পড়লে অবশ্যই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন

চিকিৎসা

স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসায় সব থেকে সফল পদ্ধতি হলো সার্জারী, যেটির মাধ্যমে ক্যান্সার কোষ গুলিকে শরীর থেকে অস্ত্র প্রচারের মাধ্যমে বাদ দেওয়া হয়। এছাড়াও কেমো থেরাপি এবং রেডিওথেরাপি র ব্যাবহার ও বহুল প্রচলিত।

সতর্কতা

১. যেহেতু ৩০ বছর বয়সের পর থেকে এই রোগের সম্ভাবনা বাড়ে, তাই অবশ্যই ৩০ এর পর থেকে সঠিক ওজন ধরে রাখার চেষ্টা করতে হবে।

২. ডায়েট এবং এক্সারসাইজ: প্রতিদিন সঠিক খাওয়াদাওয়া এবং শরীরচর্চা করুন, এটি ব্রেস্ট ক্যান্সার এর সম্ভাবনা অনেক কমিয়ে দেবে

৩. জীবনযাত্রা: একটি সাস্থ্য কর জীবন যাত্রার অভ্যাস গড়ে তুলুন। মদ্যপান এবং ধূমপান এড়িয়ে চলুন।

৪. ব্রেস্ট ক্যান্সারের কোনো রকম লক্ষণ দেখা গেলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন

img

লাং ক্যান্সার

এই ক্যান্সার টি তৈরি হয় যখন আমাদের ফুসফুসের কোষ গুলি অনিয়ন্ত্রিত ভাবে বাড়তে থাকে। এটি শুধু মাত্র ফুসফুসেই থেমে থাকে না, মেটাস্ট্যাসিসের ফলে ফুসফুসের আশেপাশের অংশেও ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্বে পুরুষ দের ক্যান্সারের প্রধান কারণ হলো ফুসফুস ক্যান্সার।

কারণ

ফুসফুস ক্যান্সারের প্রধান কারণ হলো ধূমপান এবং তামাক জাতীয় নেশার দ্রব্য সেবন। ৮৫% ফুসফুস ক্যান্সার রোগী দীর্ঘমেয়াদি তামাক সেবন করেছেন। শুধু মাত্র এটিই নয়, প্যাসিভ স্মোকিং ও ফুসফুস ক্যান্সার তৈরি করতে পারে। তাই আপনি যদি তামাক সেবন নাও করে থাকেন কিন্তু কোনো ব্যক্তি ধূমপান করছে সেই অবস্থায় তার কাছ কাছি থাকেন, তাহলে আপনারও এই রোগ টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও জেনেটিক ফ্যাক্টর এবং দূষিত বায়ুও এই রোগটি সৃষ্টি করে।

লক্ষণ

  • ১. ফুসফুস ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ টি হলো অনবরত কাশি এবং তার সাথে রক্ত
  • ২. বেশিরভাগ রোগীই সামান্য থেকে তীব্র বুকে ব্যাথা অনুভব করেন এবং তার সাথে শ্বাস কষ্ট।
  • ৩. বার বার জ্বর আসা অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার পরেও
  • ৪. আঙ্গুলের গোড়ার দিকে ব্যাথা হওয়া

 

চিকিৎসা

ফুসফুসের ক্যান্সার প্রথম ধাপে ধরা না পড়লে এটি সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং রোগীর বেচেঁ থাকার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। সার্জারি, কেমো থেরাপি বা রেডিওথেরাপি বা এই ৩ টির সমন্বিত চিকিৎসা করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে টার্গেটেড থেরাপি ব্যাবহার করা হয়ে থাকে।

সতর্কতা

১. ধূমপান এবং মাদক জাতীয় দ্রব্যের সেবন বন্ধ করা

২. প্রচুক শাকসবজি, ফল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত খাবার খাওয়া

৩. প্রতিদিন শরীরচর্চার অভ্যেস তৈরি করা

৪. একটি স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করা

img

প্রোস্টেট ক্যান্সার

পুরুষদের প্রোস্টেট গ্রন্থি যখন অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন করতে শুরু করে তখন এই ধরনের ক্যান্সার তৈরি হয়। সাধারণত দেখা গেছে কোনো পুরুষ ৫০ বছর বয়সের উর্দ্ধে গেলে তার শরীরে এই ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়।

কারণ

৫০ এর উর্দ্ধে পুরুষ দের প্রোস্টেট ক্যান্সার খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়। যদিও কোনো সঠিক কারণ এখনো অব্দি খুঁজে পাওয়া যায়নি তবে কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলি প্রোস্টেট ক্যান্সার তৈরি করতে ভূমিকা রাখে। যেমন প্রথম হলো বয়স, বয়স বাড়লে প্রোস্টেট ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। জেনেটিক্স এই ক্যান্সারের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। পূর্বপুরুষের কারোর এই রোগ হয়ে থাকলে, পরবর্তীকালে সেটি পরিবারের অন্য সদস্যের হতে পারে। এছাড়াও কিছু কিছু জাতির মধ্যে এই ক্যান্সারের প্রবণতা বেশি যেমন ব্ল্যাক স্কিন পুরুষ।

লক্ষণ

  1. ১. মূত্র ত্যাগ করতে সমস্যা, অতিরিক্ত মূত্র ত্যাগ করার প্রয়োজন অনুভব করা এবং মূত্র ত্যাগ করার সময় যন্ত্রণা।
  2. ২. শুক্রাণুর মধ্যে এবং মূত্রের মধ্যে রক্ত
  3. ৩. অতিরিক্ত ওজন কমে যাওয়া
  4. ৪. ইরেক্টাইল ডিসফাংশ

 

চিকিৎসা

এই রোগের প্রধান চিকিৎসা হলো অস্ত্র প্রচারের মাধ্যমে ক্যান্সার আক্রান্ত প্রোস্টেট টি শরীর থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া। এছাড়াও চিকিৎসক রেডিয়েশন থেরাপি ও ব্যাবহার করে থাকেন। আরো একটি আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি হলো প্রোস্টেট টিস্যুর হিটিং বা ফ্রিজিং। কিছু কিছু ক্ষেত্রে হরমোন থেরাপি প্রোস্টেট ক্যান্সারের সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

সতর্কতা

১. সঠিক খাদ্যাভ্যাস, শরীরচর্চা এবং সাস্থ্য কর জীবনযাপন পালন করা

২. বয়সের অনুপাতে ওজন বেশি হলে সেটি কমিয়ে ফেলা এবং সঠিক ওজন নিয়ন্ত্রণ করা

৩. শরীরে ভিটামিন ডি র মাত্রা বাড়ানো

৪. সেক্সুয়ালি অ্যাক্টিভ থাকা

৫. ধূমপান এবং মদ্যপান বর্জন করা

img

ব্লাড ক্যান্সার

ব্লাড ক্যান্সার হলো এমন একটি সমস্যা যাতে রক্তকণিকার বিকাশ এবং স্বাভাবিক কার্যকলাপ ব্যাহত হয়। মেলোমা, লিউকেমিয়া এবং লিম্ফোমা এই তিন ধরনের ব্লাড ক্যান্সার সাধারণত দেখা যায়। এই রোগটি খুবই প্রাণঘাতী এবং প্রথম ধাপে ধরা না পড়ে থাকলে এটি থেকে সুস্থ হওয়া প্রায় অসম্ভব।

কারণ

ব্লাড ক্যান্সার প্রধানত তৈরি হয়, DNA র গঠনের পরিবর্তন বা মিউটেশন এর জন্য। DNA আমাদের শরীরে কোষ বিভাজন এর নির্দেশ দেয়। তাই DNA র গঠনের পরিবর্তন কোষ বিভাজনের হার এবং কোষ বিভাজনের ধরনের বড়ো সরো পরিবর্তন ঘটায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই অস্বাভাবিক কোষ বিভাজনের জন্য শরীরে বিভিন্ন রকমের সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়াও স্মোকিং, কিছু কেমিক্যাল যেমন বেনজিন, জেনেটিক্স ইত্যাদিও ক্যান্সারের কারণ।

লক্ষণ

  1. ১. হটাৎ করে ওজন কমে যাওয়া কোনো সঠিক কারণ ছাড়াই
  2. ২. হাড় এবং গাঁটে ব্যাথা
  3. ৩. বারবার সংক্রমণ হওয়া
  4. ৪. রাত্রির দিকে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া
  5. ৫. ত্বকের সমস্যা, চুলকানি ইত্যাদি, যা থেকে সহজেই রক্তপাত এবং ইনফেকশন হয়ে যায়।

 

চিকিৎসা

ব্লাড ক্যান্সার থেকে সুস্থ হওয়ার জন্য কেমো থেরাপি এবং রেডিয়েশন সব থেকে বেশি ব্যাবহার হয়ে থাকে। শারীরিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে সাধারণ বা তীব্র ডোজ-এর ঔষধ ব্যাবহার করা হয় থাকে। বর্তমানে স্টেম সেল প্রতিস্থাপন বেশ কিছু রোগীর ক্ষেত্রে খুব উপকারী বলে প্রমাণিত হয়েছে। এগুলি ছাড়াও মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি, ইমিউনো থেরাপি, বায়োলজিক্যাল থেরাপি ইত্যাদিও ব্যাবহার করা হয়।

সতর্কতা

ব্লাড ক্যান্সার প্রতিরোধ করা বেশ কঠিন তবুও কিছু বিষয় মেনে চললে এই রোগের সম্ভাবনা কম হতে পারে

 

১. যে কোনো ধরনের রেডিয়েশন থেকে নিজেকে দূরে রাখা

২. কোনো কেমিক্যাল যা DNA র পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম সেগুলি থেকে দূরে থাকা

৩. ধূমপান এবং মদ্যপান বর্জন করা

৪. শরীরচর্চা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং একটি সাস্থ্য কর জীবন যাপন করা

Suggested Hospitals

CONTACT US FOR MORE DETAILS