ক্যাটারাক্ট বা সাধারণ ভাষায় ছানি একটি বয়সকালীন সাধারণ রোগ। এই রোগের ক্ষেত্রে মানুষের চোখের লেন্সের ওপর স্তর পরে যায় ফলে সাধারণ দৃষ্টি বাধা প্রাপ্ত হয়। এই রোগটি যদিও প্রাণঘাতী নয় তবে ছানি হলে সেটি মানুষের সাধারণ জীবনযাত্রা কে খুবই কষ্ট দায়ক করে তোলে।
চোখে ছানি পড়ার প্রধান কারণ হলো বয়স। এই রোগটি সাধারণত ৪৫-৫০ বছর বয়সের পর দেখা যায়। এছাড়াও চোখের লেন্সের টিস্যুর মধ্যে পরিবর্তনও ছানি সৃষ্টি তে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। ডায়াবেটিস, স্টেরয়েডের ব্যাবহার, চোখের সংক্রমন ইত্যাদি ও ছানি তৈরি করতে পারে। যদিও বয়সকাল ছাড়া এই রোগটি দেখা যায় না, তবুও কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে অল্প বয়সেও এটি হতে পারে যদি এটি জিনগত রোগ হয়।
১. ছানি পড়ার প্রথম লক্ষণ হলো ঘোলাটে দৃষ্টি এবং সব কিছু আবছা দেখা
২. কম আলোতে দেখতে না পাওয়া, ফলে রাত্রির দিকে দেখতে খুবই সমস্যা হতে পারে
৩. কোনো উজ্জ্বল বস্তুর দিকে তাকালে তার আশেপাশে বর্নবলয় দেখতে পাওয়া
৪. কোনো কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে ডবল ভিশন ও দেখা যায়
৫. তীব্র আলোয় অসুবিধা হওয়া
এই রোগের সবথেকে উপকারী এবং দীর্ঘ স্থায়ী চিকিৎসা হলো অস্ত্রপ্রচার। এই অস্ত্রপ্রচার টি খুবই সহজ এবং একদম নিরাপদ। বর্তমানে আধুনিক যন্ত্র পাতির সাহায্যে এটি আরো সহজে করা যায়। তবে অস্ত্র প্রচারের পর খুবই ভালো করে চোখের যত্ন নিতে হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রথম দিকে ডাক্তার চশমা পড়ার পরামর্শ দিতে পারেন তবে এটি অস্ত্র প্রচারের মতো দীর্ঘ মেয়াদী সমাধান নয়।
১. ডায়াবেটিস এর সমস্যা থাকলে সেটি নিয়ন্ত্রণ করা
২. অকারণে স্টেরয়েডের ব্যাবহার বন্ধ করা
৩. আল্ট্রা ভায়োলেন্ট রশ্মি থেকে চোখ কে রক্ষা করা
৪. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন, মিনারেল, হেলদি ফ্যাট, ফায়টো কেমিক্যাল যুক্ত খাবার ডায়েটের মধ্য যোগ করা ইত্যাদি।
গ্লুকোমা হলো এমন একটি রোগ যেখানে চোখের অপটিক স্নায়ু টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই অপটিক স্নায়ুর কাজ হলো চোখ থেকে নার্ভ সংকেত মস্তিষ্ক অব্দি নিয়ে যাওয়া। এই স্নায়ুর ওপর অতিরিক্ত চাপের প্রভাব হিসাবে স্নায়ু টি কর্ম ক্ষমতা হারাতে থাকে এবং অন্ধত্ব পর্যন্ত হতে পারে।
এই রোগটি সাধারণত বয়স কালে বেশি পরিমাণে দেখা যায়। এছাড়াও এই রোগটির ওপর জেনেটিক্সের প্রভাব রয়েছে, ফলে কোনো পূর্বপুরুষের এই রোগ হয়ে থাকলে বর্তমান প্রজন্মের হওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে সমস্ত মানুষ ডায়াবেটিসে ভুগছেন বা মায়োপিয়া, হাইপার মেট্রোপিয়া রয়েছে তাদের এই রোগটি হয়ে থাকে। এগুলি বাদ দিয়ে এই রোগটি হওয়ার পেছনে জাতিগত কারণও রয়েছে। এশিয়ান, আফ্রিকান এবং ক্যারাবিয়ান দের মধ্যে এই রোগটির প্রবণতা সব থেকে বেশি দেখা যায়।
১. দৃষ্টি শক্তি কমে যাওয়া
২. কোনো উজ্জ্বল আলোর দিকে তাকালে বর্নবলয় দেখতে পাওয়া
৩. চোখ লাল হয়ে যাওয়া
৪. চোখের মধ্যে চুলকানি এবং ব্যাথা
৫. বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়া
গ্লুকোমা রোগটির জন্য তিন ধরনের ট্রিটমেন্ট চিকিৎসকরা ব্যাবহার করে থাকেন। প্রথমত, লেসার ট্রিটমেন্ট ব্যাবহার করে চোখ থেকে ফ্লুইড এর উৎপাদন কমিয়ে ফেলা হয়। এছাড়াও গুরুতর ক্ষেত্রে ডাক্তার অস্ত্র প্রচারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এই ক্ষেত্রে চোখের মধ্যে থাকা অতিরিক্ত তরল অস্ত্র প্রচারের মাধ্যমে বের করে নেওয়া হয়।
যদি প্রথম ধাপেই গ্লুকোমা ধরা পড়ে এবং রোগটি গুরুতর না হয় তাহলে চিকিৎসক স্টেরয়েড আই ড্রপ ব্যাবহার করার পরামর্শ দেন, যা চোখের ভেতরের চাপ টিকে নিয়ন্ত্রন করতে সাহায্য করে।
১. ওপেন অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমা হেরিডিটিয়ারি, তাই অতীতে পরিবারের কারোর এই সমস্যা হয়ে থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন
২. একটি সঠিক ওজন ধরে রাখা এবং সাস্থ্য কর জীবন যাপন এই রোগটি থেকে আপনাকে দূরে রাখবে
৩. ধূমপান বর্জন
রিফ্রাকটিভ এরর হলো চোখের এমন একটি সমস্যা যা লেন্সের আলো প্রতিসরণের ত্রুটির জন্য হয়ে থাকে। এই সমস্যা টি দেখা গেলে কাছের,দূরের অথবা যে কোনো বস্তু কে দেখতে খুবই সমস্যা হয়ে তাকে। আলোর প্রতিসরণের পার্থক্য যত বেশি হয়, বস্তু টিকে ততটাই আবছা মনে হয়। রিফ্রাকটিভ এরর চার রকমের হয়ে থাকে মায়োপিয়া, হাইপার মেট্রোপিয়া, প্রেস বায়োপিয়া এবং আস্টিগমাটিসম।
এই রোগটির প্রধান কারণ হলো চোখের আকারের পরিবর্তন। আমাদের চোখে আলোকরশ্মি প্রবেশ করার পর লেন্সের মাধ্যমে সেটির প্রতিসরণ ঘটে। এই প্রতিসরণের ফলে রেটিনার মধ্যে প্রতিবিম্ব তৈরি হয় এবং আমরা দেখতে পায়। চোখের আকার, প্রধানত চোখের মধ্যে থাকা অংশ যেমন রেটিনা, লেন্স ইত্যাদির আকার প্রয়োজনের তুলনায় কম বা বেশি হলে আলোর প্রতিসরণের পরিমাণ ও কম বা বেশি হয়ে থাকে। ফলে, প্রতিবিম্ব ঠিক জায়গায় তৈরি হয় না এবং দৃষ্টি শক্তির পরিবর্তন ঘটে। সমস্যার তীব্রতা নির্ভর করে প্রতিবিম্ব টি সঠিক জায়গা থেকে কতটা দূরে বা কাছে তৈরি হচ্ছে তার ওপর।
১. আবছা দেখা
২. একই বস্তু কে দুটি দেখা
৩. পড়া এবং স্ক্রিনের দিকে তাকানোর সময় মাথা ব্যাথা
৪. চোখে ব্যাথা
৫. উজ্জ্বল আলোর দিকে তাকালে বর্ণ বলয় দেখা
এই রোগটির চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক সঠিক পাওয়ার যুক্ত চশমা বা কন্টাক্ট লেন্স ব্যাবহার করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এছাড়াও লেসার আই সার্জারী র মাধ্যমে এই সমস্যা টিকে দুর করা যায়। আরো একটি চিকিৎসা পদ্ধতি চিকিৎসকরা ব্যাবহার করে থাকেন সেটি হলো ইন্ট্রাঅকুলার লেন্স সার্জারী। এক্ষেত্রে চোখের অবস্থিত লেন্স টিকে পরিবর্তন করে ইন্ট্রাঅকুলার লেন্স বসানো হয়।
১. পরিবারের এই সমস্যাটির ইতিহাস থেকে থাকলে অবশ্যই চক্ষু পরীক্ষা করা এবং ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া
২. খুব কাছের কোনো বস্তুর দিকে লম্বা সময় প্রতিদিন চেয়ে না থাকা
৩. অতিরিক্ত এল ই ডি ল্যাম্প ব্যাবহার না করা
৪. নিয়মিত সঠিক সময়ে ঘুমানো অভ্যেস করা
ডায়াবেটিস রোগটি শুধুমাত্র রক্তেই শর্করা বাড়ায় না, লম্বা সময় ধরে অনিয়ন্ত্রত ডায়াবেটিস চোখের সমস্যাও তৈরি করে। টাইপ ওয়ান এবং টাইপ টু দুই ধরনের ডায়াবেটিস থেকেই এই সমস্যা টি হতে পারে। এই রোগটির লক্ষণ দেখা গেলে তৎক্ষণাৎ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ এর থেকে অন্ধত্ব হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
রক্তে অতিরিক্ত শর্করা চোখের মধ্যে অবস্থিত রেটিনা কে আস্তে আস্তে নষ্ট করতে থাকে। এই রেটিনা অংশটি আলোকরশ্মি শোষণ করে এবং অপটিক নার্ভের মাধ্যমে সেটিকে মস্তিষ্কে পাঠায়, ফলে আমরা দেখতে পাই। তাই রেটিনা নষ্ট হয়ে গেলে মানুষের দৃষ্টি শক্তি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টরলের চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এটির ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। এগুলি ছাড়াও এই রোগটি তৈরি তে জেনেটিক্স এবং প্রেগন্যান্সির ভূমিকাও রয়েছে।
১. দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণ হারিয়ে ফেলা বা ঝাপসা দেখা
২. রাত্রের বেলায় ঠিক ভাবে দেখতে না পাওয়া
৩. বিভিন্ন রঙের মধ্যে পার্থক্য করতে না পারা
৪. কোনো নির্দিষ্ট অংশ দেখতে না পাওয়া বা কালো স্পট দেখতে পাওয়া
এই রোগটির সব থেকে বহুল প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি হলো লেসার থেরাপি যা খুবই উপকারী। এছাড়াও চোখের মধ্যে অ্যান্টি VEGF ওষুধ চোখের দৃষ্টিশক্তির সমস্যা কমিয়ে ফেলে এবং স্টেরয়েড ইনজেকশন চোখের মধ্যে ফোলা ভাব কমাতে সাহায্য করে। গুরুতর সমস্যার ক্ষেত্রে চিকিৎসক অস্ত্র প্রচার করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
১. ডায়াবেটিস থাকলে অবশ্যই নিয়মিত চোখের পরীক্ষা করা প্রয়োজন
২. দৃষ্টিতে কোনো রকম পরিবর্তন দেখলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন
৩. ওষুধ, ডায়েট এবং লাইফস্টাইলের সাহায্যে শর্করা, রক্ত চাপ এবং কোলেস্টেরল কে নিয়ন্ত্রনে রাখা প্রয়োজন
এই রোগটি পিংক আই বা চোখ ওঠা নামেও পরিচিত, যেখানে কনজাঙ্কটিভার প্রদাহ দেখা যায়। এটি সব বয়সের মানুষের হতে পারে তবে বাচ্চা দের হওয়ার প্রবণতা সব থেকে বেশি যেটিতে চোখ ফুলে ওঠে, লাল হয়ে যায় এবং তার সাথে ব্যাথা করে।
এই রোগটির অনেক গুলি কারণ রয়েছে, যেমন ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের সংক্রমণ। প্রধানত স্ট্যাফাইলোকক্কাস,গোনোকক্কাসের, ক্ল্যামাইডিয়া ইত্যাদি এই রোগটি সৃষ্টির জন্য দায়ী। ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস সংক্রমন থেকে হলে এটি সহজেই এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে ছড়িয়ে পরে। এগুলি ছাড়াও রাসায়নিক কোনো বস্তুর ফলেও এই রোগটি হতে পারে। সুইমিং পুলের মধ্যে থাকা ক্লোরিন, বিষাক্ত ধোঁয়া বা বাষ্প থেকেই এই সমস্যা টি তৈরি হয়। আরো যে কারণ গুলি রয়েছে সেগুলি হলো চোখের অ্যালার্জি, লম্বা সময় ধরে কন্ট্যাক্ট লেন্সের ব্যাবহার ইত্যাদি।
এই রোগের লক্ষণ গুলি সাধারণত বেশ পরিচিত এবং সহজেই লক্ষণ গুলির মাধ্যমে রোগটি নির্ণয় করা যায়।
১. চোখের কনজাঙ্কটিভা ফুলে ওঠা এবং তার সাথে চোখের মধ্যে জ্বালা ও চুলকানির ভাব
২. চোখের সাদা অংশটি সংক্রমণের ফলে রং পরিবর্তন করে লালচে বা গোলাপী বর্ণ ধারণ করে
৩. চোখের মধ্যে কিছু পড়েছে এরকম একটি অনুভূতি
৪. চোখ ফটো সেনসিটিভ হয়ে যায়, অর্থাৎ তীব্র আলো সহ্য করতে পারেনা।
৫. চোখ দিয়ে জল পড়া ও ময়লা পড়া
৬. কিছু কিছু ক্ষেত্রে চোখে দেখতে অসুবিধা হওয়া
এই রোগটি সাধারণত খুব একটা গুরুতর হয় না এবং ৪ সপ্তাহের মধ্যে পুরোপুরি ঠিক হয়ে যায়। এই রোগটি হলে চিকিৎসক রোগের কারণটি খুঁজে বের করেন এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসা করে থাকেন। ব্যাকটেরিয়া থেকে এই রোগটি হলে সেক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ব্যাবহার করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন, অ্যালার্জি থেকে হলে অ্যান্টি হিস্টামিন আই ড্রপ দেওয়া হয়। এছাড়াও আর্টিফিসিয়াল টিয়ার্স, ঠান্ডা সেঁক ইত্যাদি উপর্গগুলি কমাতে সাহায্য করে।
১. চোখের মধ্যে বার বার হাত না দেওয়া
২. কোনো ব্যক্তির এই রোগটি হয়ে থাকলে তার কোনো প্রসাধনী, গামছা, জামা কাপড় ইত্যাদি ব্যাবহার না করা
৩. দীর্ঘ সময় কন্ট্যাক্ট লেন্সের ব্যাবহার না করা
এই রোগটি সাধারণত বয়স্ক ব্যক্তি দের মধ্যে হয়ে থাকে, যেখানে চোখের মধ্যি খানের দৃষ্টি শক্তি কমে যায় বা একদমই নষ্ট হয়ে যায়। চোখের রেটিনার মধ্যে অবস্থিত ম্যাকুলার ক্ষতির কারণে এই রোগটি তৈরি হয়। সম্পূর্ণ দৃষ্টি ব্যাহত না হলেও এই রোগটির কারণে স্বাভাবিক জীবনযাপনে বেশ অসুবিধা তৈরি হয়।
এই ম্যাকুলার অবক্ষয় টি দুই ধরনের হতে পারে ড্রাই এবং ওয়েট, এর মধ্যে ড্রাই ম্যাকুলার ডিজেনারেশন ৯০% ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। এটি হয় যখন ম্যাকুলার ভেঙ্গে যায় এবং ড্রুসেন তৈরি করে। অন্য দিকে ওয়েট ম্যাকুলার ডিজেনারেশন কম হয় কিন্তু এটির ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি। এক্ষেত্রে ম্যাকুলার নিচের রক্ত নালী গুলি বৃদ্ধি পায়, যায় ফলস্বরূপ ম্যাকুলার অবস্থানের পরিবর্তন ঘটে এবং এই রোগটি দেখা যায়।
এই রোগটি তিনটি ধাপে হয়।
১.প্রথম ধাপে এটি একমাত্র চোখের পরীক্ষার দ্বারাই বোঝা সম্ভব কারণ এটির কোনো লক্ষণ দেখা যায় না।
২.যখন সমস্যা টি দ্বিতীয় পর্যায়ে পৌঁছায় তখন খুব সামান্য দৃষ্টিশক্তির পার্থক্য বোঝা যেতে পারে। এছাড়াও পরীক্ষার মাধ্যমে রেটিনায় ড্রুসেনের উপস্থিতি বোঝা সম্ভব।
৩. একদম শেষ পর্যায়ে চোখের মধ্যে দাগ, চোখের বিকৃতি, দৃষ্টিশক্তির লোপ পাওয়া, কিছু কিছু ক্ষেত্রে অন্ধত্ব হতে পারে।
এই রোগটি থেকে চিকিৎসা করে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া সম্ভব নয়। তবে মেডিক্যাল সায়েন্সের অগ্রগতির সাথে এমন কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে, যেগুলি এই রোগটির অগ্রগতি কমিয়ে দিতে পারে যেমন ফটো ডায়নামিক থেরাপি, লেসার থেরাপি ইত্যাদি। এগুলি ছাড়াও রয়েছে অ্যান্টি-ভিইজিএফ ইনজেকশন, যেটি রেটিনার মধ্যে অস্বাভাবিক রক্তনালীর বৃদ্ধি বন্ধ করে। এই রোগের তীব্রতা কমাতে ভিটামিনের ব্যাবহার ও বহুল প্রচলিত। কিছু কিছু ভিটামিন ও মিনারেল নির্দিষ্ট পরিমাণে নিলে সেটি দৃষ্টিশক্তির কমে যাওয়া আটকাতে পারে।
১. এই রোগের পারিবারিক ইতিহাস থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে নির্দিষ্ট সময় অন্তর চোখের পরীক্ষা করুন
২. ধূমপান এই রোগের সম্ভাবনা বাড়ায়, তাই ধূমপান ত্যাগ করা অবশ্যই উচিত
৩. সাস্থ্য কর ডায়েটের অভ্যেস গড়ে তোলা
৪. ব্লাড প্রেসার ও কোলেস্টেরল থাকলে সেগুলি নিয়ন্ত্রণ করুন
এই রোগটি থাইরয়েড আই ডিসঅর্ডার নামেও পরিচিত যেখানে চোখের আশপাশ অংশ প্রচুর পরিমাণে ফুলে যায়। এই রোগটি খুব একটি গুরুতর হয় না এবং সময়ের সাথে নিজেই ঠিক হয়ে যায়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই রোগটি জটিল হতে পারে এবং সেক্ষেত্রে দৃষ্টি শক্তির সমস্যা দেখা যায়।
এই রোগটি ৪০ বছর বয়সের উর্দ্ধে বেশি দেখা যায়। এটি একটি অটো ইমিউন ডিজিজ যেখানে, আমাদের ইমিউন সিস্টেম থাইরয়েড গ্রন্থি কে অ্যাটাক করে ফলে প্রচুর পরিমাণে থাইরয়েড হরমোন ক্ষরণ হতে থাকে।আমাদের দেহের থাইরয়েড নামক হরমোনটি বেশি ক্ষরিত হলে সেটিকে হাইপার থাইরইডিসম বলে। এই হরমোনটির অতিরিক্ত উপস্থিতি থেকে গ্রেভস আই ডিজিজ হতে পারে।
এই রোগটির লক্ষণ গুলি ১-২ বছর পর্যন্ত থাকতে পারে এবং দুটি চোখ আক্রান্ত হলেও একটি চোখেই উপসর্গ গুলি দেখা যায়।
১. চোখের চারপাশ বিশেষ করে আইলিড অংশ টি প্রচুর পরিমানে ফুলে যাওয়া
২. চোখ ঠিক ভাবে বন্ধ হয় না এবং স্ফীত হয়ে যায়
৩. চোখের মধ্যে চাপ ও ব্যথার অনুভূতি
৪. কোনো বস্তু কে দুটি দেখা
৫. আলোর মধ্যে তাকাতে অসুবিধা বোধ করা
এই রোগটি যেহেতু থাইরয়েড হরমোনের অতিরিক্ত ক্ষরণের ফলে হয়ে থাকে, তাই গ্রেভস আই ডিজিজ হলে থাইরয়েডের চিকিৎসা করতে হয়। তবে এটি ছাড়াও চোখের উপসর্গ কমানোর জন্য আলাদা করে চিকিৎসা করতে হয়। আর্টিফিসিয়াল টিয়ার এই রোগের জন্য খুবই উপকারী, এটি চোখের শুকনো ভাব এবং চুলকানি কমাতে সাহায্য করে । যদি চোখের মধ্যের ফোলা ভাব অনেক বেশি থাকে তাহলে চিকিৎসক কিছু স্টেরয়েড দিতে পারেন, যেটি চোখের ফোলা ভাব নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়াও চশমার ব্যাবহার এই রোগের উপসর্গ কমাতে সাহায্য করে থাকে। যদি সমস্যা খুবই গুরুতর হয় এবং দৃষ্টিশক্তি ব্যাহত হয়, তাহলে চিকিৎসক অস্ত্রপ্রচারের সাহায্য নিতে পারেন।
১. থাইরয়েড হরমোন বেশি থাকলে সেটিকে নিয়ন্ত্রণ করা
২. ধূমপান ত্যাগ করা
৩. একটি সাস্থ্য কর জীবন যাপনের অভ্যেস গড়ে তোলা
৪. এই রোগের পারিবারিক ইতিহাস থাকলে আগে থেকে সাবধান হওয়া
এই রোগটি লেজি আই নামেও পরিচিত যেখানে যে কোন একটি চোখের দৃষ্টি শক্তি কমে যেতে পারে। এক্ষেত্রে একটি চোখ ঠিকভাবে ফোকাস করতে পারেনা, ফলে সেই চোখটির সাথে মস্তিষ্ক সংযোগ কম হতে থাকে। এই সমস্যাটি সাধারনত শুরু হয় ছোটবেলায় ৫ বছর বয়সের আগে, কিন্তু ঠিক সময়ে ধরা না পরার কারণে অন্ধত্ব পর্যন্ত হতে পারে।
এই রোগটির প্রধান কারণ চোখের কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণকারী পেশী গুলির মধ্যে ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাওয়া। এছাড়াও চোখের সাথে মস্তিষ্কের সংযোগকারী স্নায়ুর মধ্যে সমস্যা দেখা দিলেও চোখ টি কোনো বস্তু তে ফোকাস করতে পারেনা এবং দৃষ্টি শক্তি কমতে থাকে। কোনো আঘাত জনিত কারণ থেকেও এই রোগটি হতে পারে। চোখে কোনো আঘাতের ফলে যদি রেটিনা অব্দি আলো না পৌঁছায় তাহলেও এই সমস্যাটির সৃষ্টি হয়। এগুলি ছাড়াও আরো কিছু সম্ভাব্য কারণ রয়েছে যেগুলি হলো ডায়াবেটিস, প্রি ম্যাচিউর বার্থ, জেনেটিক্স ইত্যাদি।
১. এই চোখের প্রাথমিক লক্ষণ হলো কোনো বস্তুর ওপর ফোকাস করতে না পারা যে কোনো একটি চোখে।
২. আক্রান্ত চোখের দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে কমে যাওয়া এবং চোখের বলয়ের আকৃতির পরিবর্তন
৩. আক্রান্ত চোখটি তে কম আলোতে দেখতে অসুবিধা হয়
এই রোগের অনেকগুলি চিকিৎসা রয়েছে যার মধ্যে খুব সহজ সমাধান হলো চশমা বা কন্ট্যাক্ট লেন্সের ব্যাবহার। এই সমস্যাটি প্রথম দিকে ধরা পড়লে এগুলোর সাহায্য সমস্যাটির সমাধান করা যেতে পরে। এগুলি ছাড়াও রয়েছে প্যাচিং, যেটি ও এই রোগটি থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করবে। যদি প্রথম ধাপে ধরা না পড়ে বা রোগটি অনেক জটিল হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে চিকিৎসক অস্ত্রপ্রচার করে থাকেন।
১.যেহেতু এই রোগটি সময়ের সাথে জটিল আকার ধারণ করে, তাই কোনো লক্ষণ দেখা গেলই সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজন।
২. ৫ বছর বয়সী শিশু দের এই সমস্যাটি হওয়ার প্রবণতা বেশি, কিন্তু তাদের পক্ষে এই সমস্যা টি বুঝতে পারা কঠিন, তাই বড়দের সেটির দিকে নজর রাখতে হবে।