অর্থোপেডিকস

img

অস্টিওপোরোসিস

এটি হাড়ের একটি রোগ যেখানে হাড়ের ঘনত্ব কমতে থাকে ফলে হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে যায়। এই রোগটি হলে সব থেকে বেশি সমস্যা তৈরি হয় কোনো আঘাত থেকে। এই রোগটি পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে বেশি দেখা যায় এবং হাড় ক্ষয়ে যাওয়ার ফলে অঙ্গবিন্যাসের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।

কারণ

এই রোগটির অন্যতম প্রধান কারণ হলো মেনোপজ। মেনোপজের পরবর্তী সময়ে মহিলাদের শরীরে হরমোনের পরিবর্তন দেখা যায়, যেটি থেকে অস্টিওপোরোসিস হতে পারে। এছাড়াও শরীরে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি এর দীর্ঘমেয়াদি ঘাটতি থেকেও এই সমস্যাটির সৃষ্টি হতে পারে, যা পুরুষ ও মহিলা উভয়েরই হয়ে থাকে।

লক্ষণ

১. সাধারণ কাজকর্ম যেমন শরীর প্রসারিত করা, ঝোঁকা ইত্যাদি করতে অসুবিধা এবং তীব্র ব্যাথা

২. পিঠে ব্যাথা যা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। এটি বিছানা থেকে ওঠা ও হাঁটার সময় বেশি করে অনুভূত হয়

৩. উচ্চতা কমে যাওয়া ও শরীর ঝুঁকে যাওয়া

৪. অল্প আঘাতে হাড়ে চির ধরা ও ভেঙ্গে যাওয়ার প্রবণতা

৫. কিছু কিছু ক্ষেত্রে চোয়ালের হাড় ক্ষয় হতে পারে

চিকিৎসা

ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, সোডিয়াম ফ্লোরাইড ইত্যাদি উচ্চ মাত্রায় প্রয়োগ করে শরীরে হাড়ের ঘনত্ব বাড়ানো হয়। এছাড়াও, মেনোপজের পরবর্তী কলে চিকিৎসক ক্যালসিটোনিন ব্যাবহার করে এটির চিকিৎসা করতে পারেন। এই রোগটি গুরুতর হলে সেক্ষেত্রে ইস্ট্রোজেন, অ্যান্ড্রোজেন ইত্যাদি হরমোনের মাত্রা গুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে এই রোগটির চিকিৎসা করা হয়। কিছু কিছু রোগীর জন্য ব্যায়াম খুবই উপকারী হতে পারে।

সতর্কতা

১. প্রতি সপ্তাহে অনন্ত ২.৫ ঘণ্টা ব্যায়াম এই রোগটি প্রতিরোধ করতে পারে

২. যেহেতু বয়স বাড়ার সাথে এই রোগটির প্রবণতা বাড়ে, তাই বয়স বাড়লে খাদ্যতালিকার ওপর বিশেষ ভাবে নজর দেওয়া খুব প্রয়োজন।

৩. প্রতিদিন কিছুক্ষণের জন্য রোদের মধ্যে থাকা প্রয়োজন

img

ফুট ইনফেকশন

ফুট ইনফেকশন একটি ছত্রাক জনিত সংক্রমণ, যেটি অ্যাথলেট ফুট নামেও পরিচিত। এই রোগটিতে পায়ের আঙ্গুলের মধ্যবর্তী অংশ গুলি ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং ছত্রাক টির নাম অনুসারে রোগটি টিনিয়া পেডিস নামেও পরিচিত।

কারণ

এই রোগটির প্রধান কারণ হলো ডারমাটোফাইটি নামক ছত্রাক, যেটি মানব দেহের ত্বক, চুল, নখ ইত্যাদির মধ্যে থাকে। যখন মানব দেহের কোনো অংশ দীর্ঘ সময় গরম ও আদ্র হয়ে থাকে, তখন ছত্রাক টি সেই জায়গায় অনিয়ন্ত্রিত ভাবে বেড়ে ওঠে ও সংক্রমণ সৃষ্টি করে। যেহেতু লম্বা সময় ধরে জুতো মোজা পরে অভ্যেস করা অ্যাথলেট দের প্রতিদিনের কাজ, তাই এই রোগটি অ্যাথলেটদের মধ্যে সব থেকে বেশি দেখা যায়। এছাড়াও যে সমস্ত ব্যক্তির ডায়াবেটিস, এইডস এই সমস্ত রোগ রয়েছে, তাদের এই সমস্যা টি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

লক্ষণ

১. চামড়া লাল হয়ে যাওয়া, যা ধীরে ধীরে শুষ্ক আঁশের মতো হয়ে যায়

২. আঙ্গুলের মাঝখানে চুলকানি

৩. সংক্রমণের জায়গা থেকে রক্তপাত

৪. পা থেকে সংক্রমণ শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়া

চিকিৎসা

এই রোগের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক অ্যান্টিফাঙ্গাল ঔষধ ব্যাবহার করে থাকেন। রোগের তীব্রতা অনুযায়ী ওষুধের ডোজ এবং সময়কাল নির্ধারণ করা হয়। যদি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ দেখা যায় তাহলে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ঔষধ ব্যাবহার করা হয়। এছাড়াও সংক্রমণের জায়গাটিকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরিষ্কার ও ঢেকে রাখতে হয়, যাতে সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়ে।

সতর্কতা

১. ভিজে জুতো ও মোজা একদমই ব্যাবহার না করা কারণ ভিজে জায়গা থেকেই ছত্রাক অনিয়ন্ত্রিত ভাবে বেড়ে ওঠে

২. অন্য কোনো ব্যক্তির সংক্রমণ থাকলে তার ব্যাবহার করা মোজা, জুতো, রুমাল, ইত্যাদি ব্যাবহার না করা

৩. বাইরে থেকে ফিরে সব সময় ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ও পা ধোয়া

 

img

এসিএল টিয়ার

এই রোগটি লিগামেন্ট ইনজুরি নামেও পরিচিত। মানব দেহের হাঁটুতে হাড় গুলি লিগামেন্টের মাধ্যমে একে অপরের সাথে যুক্ত থাকে। হাঁটুতে চারটি প্রাইমারি লিগামেন্ট থাকে যেগুলি আঘাত পেয়ে ছিঁড়ে গিয়ে এই সমস্যা টির সৃষ্টি করে। রোগের গুরুত্ব টি নির্ভর করে ক্ষতির পরিমানের ওপর।

কারণ

এই রোগটি হয়ে থাকে আচমকা কোনো আঘাত থেকে এবং যে সমস্ত মানুষ স্পোর্টস ও ফিটনেস এর সাথে যুক্ত তাদের এই সমস্যা টি হওয়ার প্রবণতা সবথেকে বেশি। হটাৎ করে মুভমেন্টের বা গতির পরিবর্তন, লাফানোর সময় ব্যালান্স হারিয়ে ফেলা, হাঁটুর মধ্যে কোনো কিছুর ধাক্কা লাগা ইত্যাদি থেকে এই রোগটির সৃষ্টি হয়।

লক্ষণ

১. এসিএল টিয়ার এর প্রথম লক্ষণ হাঁটুতে তীব্র ব্যাথা এবং দাড়াতে বা পায়ে চাপ দিতে সমস্যা

২. হাঁটা বা দৌড়ানোর সময় রোগীর মনে হয় তাদের হাঁটুর জয়েন্ট টি খুবই দুর্বল এবং নড়বড়ে

৩. কোনো চোট পাওয়ার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে সেই জায়গা টি ফুলে ওঠা

৪. হাঁটুর মুভমেন্ট করতে অসুবিধা

চিকিৎসা

সমস্যা যদি গুরুতর না হয় তাহলে চিকিৎসক ক্রেপ ব্যান্ডেজ ব্যাবহার করার পরামর্শ এবং ব্যাথা কমানোর ওষুধ দিয়ে থাকেন। এছাড়াও চিকিৎসক নি ক্যাপ ব্যাবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন, বিশেষত তাদের জন্য যারা স্পোর্টস ও ফিটনেসের সাথে যুক্ত। যদি সমস্যা টি গুরুতর হয় বা অনেক চিকিৎসার পরেও ঠিক না হয়, তাহলে চিকিৎসক অস্ত্রপ্রচার করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

সতর্কতা

১. ঝাঁপানোর সময় ও ঝাঁপিয়ে মাটিতে পা ফেলার সময় যাতে পা টি সঠিক জায়গায় পরে তার খেয়াল রাখা

২. খেলা বা ব্যায়ামের সময় সঠিক টেকনিক ও পসচার মেনে চলা

৩. যদি আগের থেকে লিগামেন্টে কোনো আঘাত থাকে তাহলে অবশ্যই নি ক্যাপ ও অন্যান্য সাপোর্ট গুলি ব্যাবহার করা

img

রিউমাটয়েড আর্থারাইটিস

এটি এমন একটি রোগ যাতে গাঁটে ব্যাথা, প্রদাহ, ফোলা ও অন্যান্য কিছু উপসর্গ দেখা যায়। এটি একটি অটোইমিউন রোগ, যেটি সময় মতো ধরা না পড়লে বা চিকিৎসা শুরু না করলে সেখান থেকে পেশী পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যে সমস্ত জায়গা গুলি সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা হলো কনুই, হাঁটু, কব্জি, গোড়ালি ইত্যাদি জায়গা।

কারণ

এই রোগটি বেশ অনেকাংশেই জিনগত, অর্থাৎ আপনার পূর্বপুরুষের হয়ে থাকলে আপনারও হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও শরীরে হরমোনের পরিবর্তন থেকেও এই ব্যাধি টি সৃষ্টি হতে পারে। অতিরিক্ত মানসিক দুশ্চিন্তায় ভোগা, ধূমপান ইত্যাদি এই রোগের তীব্রতা বৃদ্ধি করে।

লক্ষণ

এই রোগটি মহিদের বেশি প্রভাবিত করে থাকে

১. গাঁটে ব্যাথা এই রোগটির সব থেকে পরিচিত এবং প্রথম লক্ষণ

২. কনুই, হাঁটু, কব্জি ইত্যাদি জায়গায় শক্ত মাংসপিণ্ড তৈরি

৩. গাঁটে ফোলা ভাব ও তার সাথে জায়গাটি লাল হয়ে যাওয়া

৪. দুর্বলতা

৫. রক্তাল্পতা দেখা যাওয়া

চিকিৎসা

এই রোগের চিকিৎসাই ওষুধ সব থেকে উপকারী। ব্যাথা কমানোর ওষুধ, অ্যান্টি রিউমাটিক ওষুধ ইত্যাদি ব্যাবহার করা হয়ে থাকে। এছাড়াও চিকিৎসক ফিজিও থেরাপি করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন যা গাঁটের গতিশীলতা ঠিক করতে এবং ব্যাথা কমাতে বেশ উপকারী। এগুলি বাদ দিয়ে, মালিশ, আকুপাংচার ইত্যাদিও বেশ উপকারী। তবে রোগটি বেশ গুরুতর হলে সেক্ষেত্রে অস্ত্রপ্রচারের মাধ্যমে হাঁটু বা হিপ প্রতিস্থাপন করতে হতে পারে।

সতর্কতা

১. একটি সঠিক ওজন ধরে রাখা এই রোগটি থেকে আপনাকে দূরে রাখতে পারে

২. খাদ্যতালিকায় ওমেগা ৩ যুক্ত খাবার যোগ করুন

৩. রিফাইন খাবার, অ্যালকোহল ও ধূমপান এড়িয়ে চলুন

Suggested Hospitals

CONTACT US FOR MORE DETAILS