এই রোগটি সৃষ্টি হয় যখন সাইনাস বা নাকের চারপাশের ফাঁকা জায়গাগুলি স্ফীত হয়। এই রোগটি মানুষের মধ্যে খুবই পরিচিত কারণ ভারতীয় জনসংখ্যার প্রায় ১৩% মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। রোগীর বিশেষে এটি অ্যাকিউট, সাব অ্যাকিউট, রেকারেন্ট অ্যাকিউট এবং ক্রনিক হতে পারে।
সাইনাসের প্রধান কাজ হলো মিউকাস বা শ্লেষা তৈরি করা যা শ্বাস নেওয়ার সময় বাতাস কে আদ্র করে তোলে। এছাড়াও এটি বাতাসের সাথে প্রবেশ করা ধুলো এবং ময়লা গুলিকে ফুসফুস অবদি পৌঁছাতে বাধা দেই। সাধারণ ঠান্ডা এবং এলার্জি থেকেই প্রধানত এই রোগটির শুরু হয়। এছাড়াও নাকের মধ্যে কোনো সংক্রমণ ঘটলে সেটি থেকেও সাইনুসাইটিস হতে পারে।
এই রোগের তীব্রতা কম হলেও রোগীর মধ্যে নিম্ন উপসর্গ গুলি খুব ঘন ঘন দেখা যায়
১. মাথার সামনের অংশ এবং কপালে ব্যাথা
২. নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া
৩. কাশি, যা রাত্রের দিকে বেশি হয়
৪. স্বাদ এবং গন্ধ না পাওয়া
৫. নাক থেকে সর্দি বের হওয়া এবং দুর্গন্ধ যুক্ত নিঃশ্বাস
৬. জ্বর
৭. কিছু কিছু ক্ষেত্রে বমি, অত্যধিক ক্লান্তি, চোয়াল ও কানে ব্যাথাও লক্ষ্য করা যায়
এই রোগের চিকিৎসার জন্য বেশ কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় যেমন অ্যান্টিহিস্টামিনিক ড্রাগ, নেজাল স্যালাইন ইরিগেশন, অ্যান্টিবায়োটিক, নেজাল ডিকেঞ্জেস্ট্যান্ট স্প্রে ইত্যাদি। এগুলি কাজ না করলে ডাক্তার অস্ত্রোপ্রচার করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এছাড়াও চিকিৎসা চলাকালীন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিজের জীবন শৈলীর পরিবর্তন প্রয়োজন।
১. অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী বস্তু যেমন ধুলো, পোলেন, ইত্যাদি থেকে দূরে থাকা
২. ধূমপান পুরোপুরি ভাবে ত্যাগ করা
অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া এমন একটি রোগ যেটি তে ঘুমানোর সময় শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায় এবং পুনরায় শুরু হয়। এই রোগের ক্ষেত্রে নাক ডাকার মতো সমস্যা তৈরি হয়। এছাড়াও, সেন্ট্রাল স্লিপ অ্যাপনিয়া র ক্ষেত্রে মস্তিষ্ক ঠিক ভাবে শ্বাস নেওয়ার সংকেত পাঠাতে পারে না, ফলে ঘুমানোর সময় শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা দেখা যায় ও বার বার ঘুম ভেঙে যায়।
স্লিপ অ্যাপনিয়া অন্তর্নিহিত কোনো রোগ বা শারীরিক সমস্যার কারণে হয়, যেমন
এই রোগের সমস্ত উপসর্গ গুলি রাতে ঘুমানোর সময় দেখা যায়,
১. ঘুমানোর সময় জোরে নাক ডাকা
২. সারাদিন ঝিমুনি ভাব, এবং দিনের বেলায় ঘুমানোর প্রবণতা বেড়ে যাওয়া
৩. রাতে ঘুমানোর সময় শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা হওয়া
৪. মেজাজ খিট খিটে হয়ে যাওয়া
রোগের তীব্রতা কম হলে ওজন কমানো, ধূমপান ত্যাগ, জীবন শৈলীর পরিবর্তনের মাধ্যমে এটি ঠিক করা যায়। রোগের তীব্রতা যদি অনেক বেশি হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে মাস্ক ব্যাবহার করে সিপিএপি বা কন্টিনিউয়াস পজিটিভ এয়ারওয়ে প্রেসার বজায় রাখা হয়। জিভের পজিশন ঠিক রাখতে মৌখিক যন্ত্র ব্যাবহার করা হয়। কোনরকম শারীরিক গঠনগত সমস্যার জন্য এই রোগটি হলে, সেটি ঠিক করতে অস্ত্রপ্রচার ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।
১. ধূমপান ত্যাগ করা
২. সঠিক ওজন বজায় রাখা
৩. ডান বা বাম দিকে পাশ ফিরে ঘুমানো
৪. অ্যালকোহল, ঘুমানোর ওষুধ ইত্যাদির ব্যাবহার বন্ধ করা
কানের সংক্রমণ বা ওটিটিস মিডিয়া ৩ বছরের কম বয়সী বাচ্চা দের খুব পরিচিত একটি রোগ।এই রোগটি সাধারণ ঠান্ডা লাগা থেকে শুরু হয় এবং আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পরে। বড়দের মধ্যে এই রোগের সম্ভাবনা কম হলেও ৭৫% শিশু অন্তত একবার হলেও এই রোগটিতে ভুগে থাকে।
কানের সংক্রমণের প্রধান কারণ ইউস্টেচিয়ান টিউব বন্ধ হয়ে যাওয়া বা ফুলে যাওয়া। সাধারণ ঠান্ডা লাগা থেকেই এই সমস্যা টি প্রধানত শুরু হয়। যেহেতু ৩ বছরের কম বয়সী বাচ্চা দের ইউস্টেচিয়ান টিউব অনেক ছোট হয়, তাই তারা সহজেই সংক্রমিত হয়ে পড়ে। এছাড়াও যে সমস্ত শিশুর ক্লেফট্ পেলেট, ডাউন সিনড্রোম ইত্যাদি সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এই সংক্রমণের হার অনেক টাই বেশি থাকে।
১. এই রোগটির প্রাথমিক লক্ষণ হলো কানে ব্যাথা
২. শ্রবণ শক্তি কমে যাওয়া
৩. জ্বর ও ঠান্ডা লাগা
৪. খিদে ও ঘুম কমে যাওয়া
৫. কানের মধ্যে ঘষা লাগা বা টান অনুভব করা
৬. কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই সমস্যা টি নিজের থেকেই ঠিক হয়ে যায় কিন্তু সমস্যা টি বাড়তে থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের পরমর্শ নেওয়া উচিত। প্রথম ধাপে চিকিৎসক সাধারণত ওরাল অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাবহার করে থাকেন। এছাড়াও ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কানের ড্রপ ব্যাবহার করা এই রোগের জন্য খুবই ফলপ্রদ। গুরুতর ক্ষেত্রে ডাক্তার গ্রোমেট ব্যাবহার করে থাকেন, যেটির সাহায্য কানের মধ্যে সংক্রমণের জন্য তৈরি হওয়া অতিরিক্ত তরল বের করে ফেলা হয়। এছাড়াও গরম সেঁক, ব্যাথা ও অন্যান্য উপসম কমাতে সাহায্য করে।
১. বাচ্চা কে ঠান্ডা লাগা এবং অন্যান্য রেসপিরেটরি রোগ থেকে দূরে রাখা
২. এয়ার ওয়াক্স বের করার জন্য কটন বাড, আঙ্গুল, সেফটিপিন ইত্যাদি ব্যাবহার না করা
৩. বাচ্চা কে সময় মতো ভ্যাকসিন দেওয়া এবং ব্রেস্টফিড করানো
৪. বার বার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া
এই সমস্যা টির ফলে রোগী ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। ভার্টিগো রোগে ভোগা ব্যাক্তি সবসময় মাথা ঘোরা ও মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার সমস্যায় ভোগেন, যা বেশ গুরুতর হতে পারে।
এই রোগটি বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকতে পারে, তার মধ্যে সব থেকে পরিচিত কারণ টি হলো কানের ভেতরের অংশ, যা শরীরকে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, সেটি ঠিক ভাবে কাজ না করা। এছাড়াও মস্তিষ্কের কোনো অংশের সমস্যা থেকেও এর রোগটি তৈরি হতে পারে, যেটিকে বিনাইন প্যারোক্সিসমাল পজিশনাল ভার্টিগো বলা হয়। এছাড়াও ডায়াবেটিস, অ্যাথেরোস্কেলেরোসিস, টিউমার, কানের ভিতরে ছিদ্র ইত্যাদি থেকেও এই সমস্যা টি তৈরি হয়।
১. অতিরিক্ত মাথা ঘোরা এবং ভারসাম্য বজায় না রাখতে পারা
২. শ্রবণ শক্তি হারিয়ে ফেলা
৩. কানের মধ্যে আওয়াজ হওয়া যা টিনিটাস নামে পরিচিত
৪. হৃদস্পনদনের পরিবর্তন হওয়া
৫. শ্বাস প্রশ্বাস নিতে অসুবিধা হওয়া
৬. মুখে প্যারালাইসিসের ফলে কথা বলতে সমস্যা হওয়া
৭. ঠিক ভাবে হাঁটতে না পারা
৮. দুর্বলতা অনুভব করা
এই রোগের চিকিৎসা করার জন্য ডাক্তার আগে রোগের সঠিক কারণ টি ঠিক ভাবে খুজ বের করেন এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু করেন। প্রধানত ওষুধের মাধ্যমেই এই রোগটির চিকিৎসা করা হয়। এছাড়াও ডাক্তার কিছু ব্যায়াম করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন যা ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং ঠিকভাবে চলতে সাহায্য করে। কানালিথ রিপজিশনিং ট্রিটমেন্ট, এরোবিক কন্ডিশনিং পদ্ধতি গুলিও এই চিকিৎসায় বহুল প্রচলিত।
১. ভার্টিগোর সমস্যা থেকে থাকলে হটাৎ করে শরীরের অবস্থান পরিবর্তন থেকে বিরত থাকুন
২. তীব্র আলো, স্ক্রিন এর দিকে তাকিয়ে থাকা থেকে বিরত থাকুন
৩. চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা বজায় রাখুন
বয়সের সাথে সাথে শ্রবণ ক্ষমতার হ্রাস খুব স্বাভাবিক হলেও, অন্যান্য কিছু কারণেও এই সমস্যা টি হতে পারে। রোগের তীব্রতা অনুযায়ী এটিকে মৃদু, মাঝারি এবং তীব্র তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যদি সমস্যা খুব গুরুতর হয় সেক্ষেত্রে রোগী পুরোপুরি বধির হয়ে যেতে পারে।
বয়সকালে, বিশেষ করে ৪০ বছর বয়সের পর থেকে শ্রবণ শক্তি এমনিতেই কমতে থাকে, কিন্তু এর থেকে কম বয়সী বা শিশুদের ক্ষেত্রে কম শোনার আরো যে কারণ গুলি রয়েছে তা হলো গর্ভাবস্থার সময় কোনো জটিলতা। গর্ভাবস্থায় সংক্রমণ বা কোনো ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসাবে এই সমস্যা টি হতে পারে। এছাড়াও জন্মের সময় কোনো জটিলতা যেমন ওজন কম, জন্ডিস ইত্যাদি ও এই সমস্যার সূত্রপাত ঘটাতে পারে। কানের মধ্যে কোনো সংক্রমণ, মাম্পস, মিসেল, পক্স, ক্ষত, ময়লা জমে যাওয়া ইত্যাদি কানের শ্রবণ শক্তি কমিয়ে দেয়। বর্তমানে যে কারণটি শ্রবনশক্তি র ওপর খুবই ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে তা হলো দীর্ঘ সময় ধরে খুব জোর আওয়াজে হেডফোন, স্পিকার ইত্যাদি তে গান শোনা, অতিরিক্ত আওয়াজের মধ্যে কাজ করা ইত্যাদি।
১. সামান্য দুর থেকেও কোনো ব্যক্তি কথা বললে স্পষ্ট শুনতে না পাওয়া
২. একই কথা শুনতে না পাওয়ার জন্য বার বার জিজ্ঞেস করা
৩. স্বাভাবিকের থেকে খুব জোড়ে কথা বলা, গান শোনা বা টিভি দেখা
৪. সশব্দ পরিবেশের মধ্যে কোনো কিছু বুঝতে না পারা
এই রোগের চিকিৎসা হয় ঠিক কি কারণে রোগটি সৃষ্টি হয়েছে সেটি নির্ণয় করার পরে। কোনো সাময়িক সমস্যা যেমন কানে ময়লা জমা, ঠান্ডা লাগা এগুলি থেকে শ্রবণ শক্তি কম হলে সেটি খুব সহজেই ঠিক করে ফেলা যায়। কিন্তু যদি দীর্ঘ মেয়াদী কোনো কারণের জন্য এই সমস্যা টি হয় তাহলে চিকিৎসক সেই নির্দিষ্ট কারণ টিকে শনাক্ত করে চিকিৎসার মাধ্যমে সেটিকে ঠিক করার চেষ্টা করেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে যদি চিকিৎসার উপায় না থাকে তাহলে ইমপ্ল্যান্ট ব্যাবহার করা যেতে পারে যেটি সঠিক ভাবে শুনতে ও স্বাভাবিক জীবন বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
১. দীর্ঘ সময় ধরে অতিরিক্ত আওয়াজ যুক্ত পরিবেশে না থাকা
২. খুব জোর আওয়াজে হেডফোন ব্যাবহার না করা
৩. কানের মধ্যে সংক্রমণ এড়াতে পিন, কটন বাড ইত্যাদির ব্যাবহার বন্ধ করা
৪. মিসেল, মাম্পস, পক্স ইত্যাদি রোগের ভ্যাকসিন নেওয়া
ল্যারিনজ্যাইটিস বা স্বর যন্ত্রের প্রদাহ এমন একটি রোগ যেখানে প্রদাহের ফলে স্বরযন্ত্রের কম্পনের পার্থক্য ঘটে এবং গলার স্বর কর্কশ হয়ে যায়। এই রোগে স্বর যন্ত্রের আস্তরণ ফুলে যায় এবং গলায় ব্যাথা, কাশি, ইত্যাদি সমস্যার সৃষ্টি হয়। এই রোগটিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যদি সমস্যাটি ৩ সপ্তাহের বেশি থাকে তাহলে সেটি দীর্ঘ স্থায়ী প্রদাহ এবং যদি ৩ সপ্তাহের কম থাকে তাহলে সেটিকে সরল প্রদাহ বলা হয়ে থাকে।
এই রোগের প্রধান কারণ হলো স্বর যন্ত্রের মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণ। এছাড়াও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ থেকেও এটি হতে পারে। সংক্রমনের সময় যদি স্বর যন্ত্রের ওপর কোনো কারণে চাপ পরে সেটি থেকে প্রদাহ আরো বাড়তে পারে এবং গুরুতর অবস্থা ধারণ করতে পারে। এগুলি ছাড়াও কোনো বিষাক্ত ধোঁয়া বা রাসায়নিক শ্বাসের মাধ্যমে ভেতরে গেলেও সেটি থেকে এই সমস্যাটি হতে পারে। অতিরিক্ত ধূমপান এবং মধ্যপানও এই সমস্যাটির সৃষ্টি করে থাকে।
১. এই রোগটি হলে প্রথম যে লক্ষণটি দেখা যায় তা হলো গলার স্বরের পরিবর্তন এবং কণ্ঠস্বর কর্কশ হয়ে যায়
২. শ্বাস নেওয়ার সময় গলার মধ্যে সাঁই সাঁই শব্দ হওয়া
৩. এছাড়াও গলার ব্যাথা বিশেষ করে ঢোক গেলার সময়
৪. কাশি
৫. জ্বর, মাথা ব্যাথা, নাক দিয়ে জল পড়া ইত্যাদিও হতে পারে।
এই রোগটি খুব একটি গুরুতর নয় এবং সময়ের সাথে নিজেই ঠিক হয়ে যায়। যদি উপসর্গ গুলি গুরুতর হয় সেক্ষেত্রে উপসর্গ গুলি কমানোর জন্য চিকিৎসক ঔষধ ব্যবহার করে থাকেন। যেহেতু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভাইরাস থেকে এই রোগটি সৃষ্টি হয়, তাই অ্যান্টি ভাইরাল ওষুধ এই রোগের জন্য খুব উপকারী। গলার ব্যাথা কমানোর জন্য চিকিৎসক ব্যাথা কমানোর ওষুধ দিতে পারেন। ওষুধ ছাড়াও বেশ কিছু ঘরোয়া চিকিৎসা রয়েছে যা এই রোগটি থেকে আপনাকে সুস্থ করে তুলবে, যেমন উষ্ণ নুন জল দিয়ে গার্গেল করা, গরম জলের ভাপ নেওয়া, কথা কম বলা, বেশি করে জল খাওয়া ইত্যাদি।
১. খুব জোড়ে চিৎকার না করা
২. যে সমস্ত ব্যক্তি কে কাজের জন্য স্বরযন্ত্রের ওপর অতিরিক্ত চাপ দিতে হয়, তাদের গলার যত্ন নেওয়া
৩. ধোঁয়া, ধুলো ইত্যাদি থেকে নিজেকে দূরে রাখা
৪. কিছু সময় অন্তর অন্তর জল পান করা
টনসিল মানব দেহের গলার পিছনে অবস্থিত ডিম্বাকৃতি গ্রন্থি, যেটির মধ্যে প্রদাহ কে টনসিলাইটিস বলা হয়। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ফার্স্ট লাইন প্রতিরক্ষা যেখানে মুখের মধ্যে প্রবেশ কারী ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস এটির দ্বারা ধ্বংস হয়। এই গ্রন্থির মধ্যে প্রদাহ প্রধানত দেখা যায় শিশু দের মধ্যে তবে প্রাপ্ত বয়স্কদেরও এই সমস্যা টি হতে পারে।
এই রোগটির প্রধান কারণ ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ। স্ট্রেপটোকক্কাস পাইজেনস ব্যাকটেরিয়া মূলত এই রোগটির জন্য দায়ী। তবে এটি ছাড়াও স্ট্রেপটোকক্কাসের অন্য স্ট্রেন গুলিও এই সমস্যা তৈরি করতে পারে। রোগটি ভাইরাস ঘটিত হলে সেটির জটিলতা কম হয় এবং নিজের থেকেই সমস্যাটি ঠিক হয়ে যায়। যে সমস্ত ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের এই সমস্যাটি হওয়ার ঝুঁকি সব থেকে বেশি।
এই রোগের লক্ষণ প্রথম দিকে সাধারণ ঠান্ডা লাগার মতো হয় এবং ধীরে ধীরে অন্য লক্ষণ গুলি প্রকাশ পায়
১. গলায় ব্যাথা বিশেষ করে খাবার খাওয়ার সময়
২. টনসিল ফুলে ওঠা এবং শক্ত হয়ে যাওয়া
৩. গলার মধ্যে খস খসে ভাব
৪. জ্বর
৫. দুর্বলতা অনুভব করা
৬. রোগটি জটিল আকার ধারণ করলে শ্বাস নেওয়ার অসুবিধা হতে পারে
৭. স্লিপ অ্যপনিয়া, টনসিলের সেলুলাইটিস, পেরি টনসিলার ফোঁড়া ইত্যাদি এই রোগের জটিলতার লক্ষণ
যদি ভাইরাসের কারণে সমস্যাটি হয় তাহলে এটির কোনো চিকিৎসা প্রয়োজন হয় না এবং নিজের থেকে টনসিলাইটিস ঠিক হয়ে যায়। সমস্যা টি ব্যাকটেরিয়া থেকে হলে সেক্ষেত্রে অ্যান্টি বায়োটিক ওষুধ এই রোগটি থেকে সুস্থ হতে সাহায্য করে। এছাড়াও উপসর্গ গুলি নির্মূল করার জন্য চিকিৎসক অন্যান্য আরো কিছু ওষুধ ব্যাবহারের নির্দেশ দিতে পারেন। এছাড়া বেশ কিছু ঘরোয়া উপায় যেমন নুন জল দিয়ে গার্গেল, বার বার গরম তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ করা, নরম খাবার খাওয়া, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া এই রোগটি সরিয়ে তুলতে সাহায্য করে।
১. খাবার খাওয়ার আগে বা মুখে হাত দেওয়ার আগে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া
২. কোনো ব্যক্তির টনসিলাইটিস থাকলে তার থেকে দূরত্ব বজায় রাখা
৩. দিনে অন্তত দু বার ব্রাশ করা এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল মাউথ ওয়াশ ব্যাবহার করা।
এই রোগটি নাকের অ্যালার্জি বা হে ফিভার নামেও পরিচিত, যেটির লক্ষণ গুলি একদমই সাধারণ জ্বর ঠান্ডা লাগার মতো কিন্তু এটি ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ থেকে নয়, অ্যালার্জেন থেকে হয়। বিভিন্ন রকমের অ্যালার্জেন রয়েছে, কিন্তু কোন ব্যক্তি কোন অ্যালার্জেন দ্বারা প্রভাবিত হবে সেটি ব্যক্তি বিশেষে আলাদা হয়।
যখন মানুষ প্রথমবার কোনো অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে আসে, তখন শরীর সেই অ্যালার্জেন থেকে বাঁচতে অ্যান্টিবডি তৈরি করে রাখে। পরবর্তী কালে আবার সেই অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে এলে শরীর সেই অ্যান্টিবডি গুলি কে ব্যাবহার করে শরীর কে রক্ষা করতে। এই অ্যান্টিবডি গুলির জন্য শরীরে বেশ কিছু রাসায়নিক পরিবর্তন হয় এবং বেশ কিছু রাসায়নিক ক্ষরিত হয় যেটি হে ফিভারের লক্ষণ গুলি প্রকাশ করে। খুব পরিচিত কিছু অ্যালার্জেন হলো ধুলো, ছত্রাক, ফুলের পরাগ, কোনো প্রাণীর লালা ইত্যাদি। ব্যক্তি বিশেষে এই যে কোনো একটি বা একাধিক অ্যালার্জেন হে ফিভার তৈরি করে।
অ্যালার্জি রাইনাইটিস অনেকগুলি লক্ষণ রয়েছে এবং রোগের তীব্রতা অনুযায়ী এক বা একাধিক লক্ষণ দেখা যেতে পারে।
১. এই রোগের সব থেকে পরিচিত লক্ষণ হলো অতিরিক্ত হাঁচি, যা থামতেই চাই না
২. গলা খুসখুস করা এবং কাশি
৩. চোখ ফুলে যাওয়া, লালচে ভাব, চোখের চুলকানি এবং তার সাথে চোখ দিয়ে জল পড়া
৩. নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং নাক দিয়ে জল পড়া
৪. নাকের মধ্যে চুলকানি এবং শুকনো ভাব
৫. ক্লান্তির অনুভূতি
অ্যালার্জি থেকে তৈরি উপসর্গ গুলি কমানোর জন্য বিভিন্ন ওষুধের ব্যাবহার করা হয়, যেমন অ্যান্টিহিস্টামিন যেটি নাক দিয়ে জল পড়া, হাঁচি, চুলকানি ইত্যাদি রোধ করে। এছাড়াও রয়েছে নাসাল স্প্রে যা নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, জল পড়া ইত্যাদি সমস্যা গুলি দুর করে। অ্যালার্জি র চিকিৎসার জন্য অ্যালার্জি শটসের ব্যাবহার ও বহুল প্রচলিত। এগুলি ছাড়া রয়েছে অ্যান্টি অ্যালার্জিক ট্যাবলেটের ব্যাবহার যেটি জিভের নিচে রাখা হয়।
১. এই রোগ থেকে বাঁচার সব থেকে প্রথম এবং গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো অ্যালার্জেন থেকে নিজেকে দূরে রাখা।কোন বস্তু থেকে অ্যালার্জি আছে সেটি পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করে সেটির থেকে দূরত্ব বজায় রাখা সব থেকে উপকারী।
২. অ্যালার্জেন থেকে দূরে থাকার জন্য মাস্ক, সানগ্লাস, হাই পো অ্যালার্জেনিক বেডিং ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে।