গলস্টোন বা গল ব্লাডার স্টোন হলো এমন একটি রোগ, যায় ফলে গল ব্লাডারের ভিতর ক্যালসিয়াম, বিলিরুবিন, কোলেস্টেরল এবং আরো অন্যান্য কিছু বস্তু জমতে থাকে এবং আস্তে আস্তে সেগুলি শক্ত পাথরের রূপ নিয়ে নেয়। গল স্টোন একটি ক্ষুদ্র পাথর এর মত আকার থেকে গলফ বল এর মতো বড়ও হতে পারে।
গল ব্লাডার হওয়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে তার মধ্যে প্রধান হলো পিত্তের মধ্যে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল বা বিলিরুবিন জমতে থাকা। এগুলি সময়ের সাথে পাথরের রূপ ধারণ করে। এছাড়াও ,গল ব্লাডার ঠিক ভাবে কাজ না করলে এর ভিতরের সামগ্রী গুলি প্রয়োজনের সময় ঠিক ভাবে ক্ষরণ হয় না এবং তা পাথরের রূপ নেয়।
প্রথম ধাপে এর লক্ষণ বোঝা যায় না বললেই চলে, পাথর গল ব্লাডার থেকে নালীতে এসে পৌঁছালে তার পর লক্ষণ বোঝা যায়
১. সব সময় বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়া
২. তলপেটে অতিরিক্ত যন্ত্রণা
৩. তলপেটে মোচড়ের অনুভূতি হওয়া
এই রোগের সব থেকে উপকারী চিকিৎসা হলো অস্ত্র প্রচারের মাধ্যমে গল ব্লাডার বাদ দিয়ে দেওয়া। সেক্ষেত্রে পরবর্তী কালে স্টোন হওয়ার সম্ভাবনা আর থাকে না। যদি পাথরের আকার খুব ছোট হয় এবং সমস্যা গুরুতর না হয় সেক্ষেত্রে ওষুধ ব্যাবহার করেও এই রোগের চিকিৎসা করা যায়। তবে এই ক্ষেত্রে পরবর্তী কালে পুনরায় গল স্টোন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
১. বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী একটি সঠিক ওজন ধরে রাখা গল স্টোন থেকে বাঁচার সব থেকে ভালো উপায়।
২. অসময়ে খাবার খাওয়া, না খেয়ে থাকা এবং দ্রুত ওজন কমানো থেকে বিরত থাকা
৩. প্রতিদিন শরীর চর্চা গল স্টোনের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।
আলসেরাটিভ কোলাইটিস হলো একটি কঠিন রোগ যা লার্জ ইন্টেসটাইন এবং মল দ্বারের ভেতরের অংশে প্রদাহ সৃষ্টি করে। সঠিক সময়ে শনাক্ত না করা গেলে এই রোগটি প্রাণঘাতী ও হতে পারে।
বেশ কিছু কারণ রয়েছে যা আলসেরাটিভ কোলাইটিস রোগটি তৈরি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রথম কারণ টি হলো বয়স। এই রোগটি সাধারণত ৩০ বছর বয়সের আগে বেশি দেখা যায় এবং তার পরে এটির সম্ভাবনা আস্তে আস্তে কমতে থাকে। কিছু ক্ষেত্রে এই রোগটি জেনেটিক্সের ওপর ও নির্ভর করে অর্থাৎ পরিবারের কারোর এটি হয়ে তাহলে আপনারও হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিছু কিছু জাতি রয়েছে যারা এই রোগটির দ্বারা বেশি প্রভাবিত হয় যেমন ইহুদি। এছাড়াও কিছু কিছু মেডিসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবে এই রোগটি দেখা যেতে পারে।
১. অনেক লম্বা সময় ধরে জ্বর হওয়া, যায় কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না
২. পেটে অতিরিক্ত ব্যাথা হওয়া
৩. আস্তে আস্তে ওজন কমতে থাকা
৪. মলদ্বারে ব্যাথা, রক্তপাত এবং প্রয়োজন সত্বেও মলত্যাগ করতে না পারা
৫. ডায়েরিয়া এবং দুর্বলতা
প্রদাহের নির্দিষ্ট জায়গা এবং সমস্যার গভীরতা অনুযায়ী এটির চিকিৎসা হয়ে থাকে। রোগটি খুব গুরুতর না হলে সাধারণত ওষুধের মাধ্যমে রোগীকে সুস্থ করে তোলা যায়। তবে গুরুতর অবস্থায় ডাক্তার প্রোকটোকোলেক্টমি বা কোলনের অস্ত্রপ্রচার করতে পারেন। অনেক সময় রোগীর শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী দুটির প্রয়োগ একসাথে করা হয়।
১. সারাদিন প্রচুর পরিমাণে জল খাওয়া এবং কফি, সফট ড্রিংক এগুলি কম খাওয়া
২. প্রতিদিন খুব সাধারণ শরীরচর্চা করা
৩. প্রতিদিনের জীবনে স্ট্রেস কন্ট্রোল করা, কারণ স্ট্রেস হজমের ওপর প্রভাব ফেলে।
৪. সাস্থ্য কর খাওয়া দাওয়া করা
গ্যাসট্রো এসোফ্যাগাল রিফ্লাক্স ডিজিজ বা GERD এমন একটি রোগ যেখানে ফুড পাইপ বা এসোফ্যাগাসের শেষ প্রান্ত টি ঠিকভাবে বন্ধ হয় না, যায় ফলে পাকস্থলির মধ্যে থাকা খাবারের মন্ড ফুড পাইপের ওপরে উঠে আসে এবং অস্বস্তির সৃষ্টি করে।
এই রোগটি হওয়ার প্রধান কারণ হলো ফুড পাইপের নিচের অংশের মাসলের দুর্বলতা। এই দুর্বলতা বিভিন্ন কারণে সৃষ্টি হয় যেমন প্রথম কারণ হলো ওবেসিটি বা অতিরিক্ত ওজন। অতিরিক্ত পরিমাণে কফি বা অ্যালকোহল পান করলেও এই সমস্যা দেখা যায়। প্রেগন্যান্সির অবস্থায় GERD র সমস্যা বেশিরভাগ মহিলার ক্ষেত্রেই লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়াও হাই ফ্যাট ডায়েট এবং অতিরিক্ত মসলা যুক্ত খাবার GERD হওয়ার পিছনে গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১. GERD র সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ টি হলো সপ্তাহে ২ বারের বেশি হার্ট বার্ন হওয়া
২. বুকের মাঝখানে জ্বালার অনুভূতি
৩. খাবার গিলতে সমস্যা হওয়া
৪. মুখ টক লাগা এবং মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হওয়া।
৫. খাবার খাওয়ার পরেই অস্বস্তি এবং বুকে ব্যাথা শুরু হওয়া
এক্ষেত্রে ডাক্তার রোগের গুরুত্ব অনুযায়ী চিকিৎসা করে থাকেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঔষধ, জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং স্ট্রিক্ট ডায়েট এই রোগের প্রধান চিকিৎসা। এছাড়াও ডাক্তার কিছু রিলাক্সেশন টেকনিক অভ্যেস করতে দিতে পারেন। অস্ত্র প্রচার সাধারণত খুব গুরুতর অবস্থা না হলে করা হয় না। গুরুতর অবস্থায় অস্ত্র প্রচার করে এসোফ্যাগাসের শেষ প্রান্তের মাসল টিকে শক্ত করা হয়।
১. যে সমস্ত খাবার এসিডিটি তৈরি করে সেগুলি বর্জন করা যেমন কফি, অতিরিক্ত মসলা জাতীয় খাবার ইত্যাদি
২. ধূমপান এবং মদ্যপান থেকে বিরত থাকা
৩. একটি সঠিক ওজন ধরে রাখা ও স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করা
প্যানক্রিয়াস মানব শরীরের পাচন তন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ন অংশ যেখান থেকে হরমোন এবং এনজাইম নিঃসরণ হয়। বিভিন্ন কারণে প্যানক্রিয়াসের ভিতরের অংশে প্রদাহ সৃষ্টি হলে সেটিকে প্যানক্রিয়াটাইটিস বলা হয়ে থাকে। এই রোগটি হলে রোগীর তৎক্ষণাৎ চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগের বেশ কিছু কারণ রয়েছে। তবে কিছু পরীক্ষা থেকে দেখা গেছে যে সমস্ত মানুষ প্রচুর পরিমাণে মদ্যপান করে থাকে তাদের প্যানক্রিয়াটাইটিস হওয়ার সম্ভাবনা সব থেকে বেশি। এছাড়াও গল ব্লাডারে পাথর হলে সেটি থেকেও এই রোগটি শুরু হতে পারে। কোনো পূর্বপুরুষের প্যানক্রিয়াস বা অগ্নাশয়ের সমস্যা থেকে থাকলে, পরবর্তী জেনারেশনের সেই রোগটি হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও পেটে আঘাত পাওয়া ও কিছু রোগের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থেকেও এই রোগটি সৃষ্টি হতে পারে।
১. এই রোগের প্রধান লক্ষণটি হলো পেটের উপরিভাগে এবং পিঠে তীব্র ব্যাথা ও তার সাথে পেট ফুলে যাওয়া
২. সব সময় বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়া
৩. হৃদস্পন্দন দ্রুত হওয়া এবং প্রচুর পরিমাণে ঘাম হওয়া
৪. ওজন কমতে থাকা
৫. জ্বর এবং ডায়েরিয়া
যদি গল ব্লাডারের পাথর থেকে এই রোগটি সৃষ্টি হয়, তাহলে গল ব্লাডার অস্ত্র প্রচারের মাধ্যমে বাদ দিলে রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে। প্রদাহের ফলে যদি অগ্নাশয়ের অবস্থা খুবই খারাপ তাহলে অস্ত্র প্রচারের মাধ্যমে অগ্নাশয়ের কিছু অংশ বাদ দিতে হতে পারে। এছাড়াও এন্ডোস্কোপি, ইনট্রা ভেনাস ফ্লুইড, মেডিসিন ইত্যাদি ব্যবহার করে রোগী কে সুস্থ করে তোলা হয়।
১. এই রোগটি থেকে বাঁচতে হলে সবার প্রথম যেটি প্রয়োজন সেটি হলো মদ্যপান ত্যাগ করা
২. তৈলাক্ত এবং অতিরিক্ত মসলা যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা
৩. ক্র্যাশ ডায়েট বন্ধ করা এবং একটি সাস্থ্য কর ডায়েট মেনে চলা
৪. যদি কোনো ব্যাক্তি ওবেসিটি তে ভুগে থাকে তাহলে অতিরিক্ত ওজন কমানো