করোনারি আর্টারি খুব প্রচলিত একটি হৃদরোগ যেখানে করোনারি আর্টারি অর্থাৎ যে ধমনি গুলি হৃদযন্ত্র কে রক্ত সরবরাহ করে সেগুলি ঠিক ভাবে কাজ করা বন্ধ করে দেয়। তবে এই রোগের সব থেকে মারাত্মক বিষয় টি হলো, যতক্ষণ না এই রোগ হার্ট এ্যাটাক বা অন্য কোনো প্রাণঘাতী সমস্যা তৈরি করে ততক্ষণ এটি ধরা পড়ে না।
এই রোগটি সৃষ্টির প্রধান কারণ হৃদপিণ্ডে রক্ত সরবরাহ কারী ধমনীর মধ্যে অবাঞ্ছিত পদার্থ (যেমন ফ্যাট)জমে যাওয়া,যা ধমনী গুলি কে সংকীর্ণ বানিয়ে ফেলে। এই অবাঞ্ছিত পদার্থ গুলি ধমনী কে সরু এবং শক্ত করে তোলে, এর ফলে হৃৎপিন্ডে রক্ত সরবরাহ কমে যায়। হৃৎপিণ্ড পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন ও পুষ্টি না পাওয়ায় এটি ঠিক ভাবে কাজ করতে পারেনা এবং শ্বাসকষ্ট সহ অন্যান্য সমস্যা শুরু হয়।
যদিও প্রথম দিকে এই রোগের লক্ষণ একদম স্পষ্ট নয়, তবে সময়ের সাথে সাথে নিম্ন লক্ষণ গুলি দেখা যেতে পারে।
১. বুকের মধ্যে চাপ অনুভব করা
২. বুকের মধ্যে ব্যাথা, যেটি অ্যানজিনা নামেও পরিচিত
৩. শ্বাসকষ্ট
৪. অল্প একটু তেই ক্লান্তি অনুভব করা
৫. কিছু কিছু ক্ষেত্রে পিঠের ওপরের অংশেও চাপ অনুভব করা
করোনারি আর্টারি রোগের ক্ষেত্রে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকর চিকিৎসা হলো এই তিনটি – করোনারি আর্টারির বাইপাস গ্রাফট অপারেশন, অ্যানজিওপ্লাস্টি ও স্তেন্ট বসানো, এবং মিনিমাল ইনভ্যাসিভ সার্জারী। এগুলির সাথে সাথে ঔষধ এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তন খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যা আস্তে আস্তে রোগী কে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তোলে।
১. জীবনযাত্রার পরিবর্তন এই রোগ থেকে দূরে থাকার সব থেকে সহজ উপায়। সুষম খাদ্য গ্রহণ, নিয়মিত শরীরচর্চা, মদ্যপান ও ধূমপান থেকে দূরে থাকা খুবই প্রয়োজন।
২. যে সমস্ত মানুষের কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্ত চাপ ইত্যাদির সমস্যা আছে তাদের নিয়মিত ঔষধ এবং ডাক্তারের নির্দেশ অনুযায়ী চেক আপ প্রয়োজন।
অ্যারিথমিয়া বা অনিয়ন্ত্রিত হৃদস্পন্দন হার্টের আর একটি বহুল প্রচলিত রোগ। এক্ষেত্রে হৃদপিণ্ড তার স্বাভাবিক ছন্দ বজায় রাখতে পারে না। এটি তিন রকমের হতে পারে, ট্রাকিকার্ডিয়া অর্থাৎ খুব দ্রুত গতি সম্পন্ন হৃদস্পন্দন, ব্র্যাডিকার্ডিয়া বা ধীর গতি হৃদস্পন্দন এবং সম্পূর্ণ অনিয়মিত হৃদস্পন্দন ।
অ্যারিথমিয়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে যেমন হার্টের পেশীর মধ্যে রক্ত প্রবাহ কমে যাওয়া, হার্টের পেশীর শক্ত হয়ে যাওয়া ইত্যাদি যেগুলি হৃদস্পনদনে প্রভাব ফেলে। কোনো দুর্ঘটনা বা নেগেটিভ অনুভূতিও এই সমস্যার সৃষ্টি করে থাকে। শরীরের মধ্যে ইলেক্ট্রোলাইটস কমে গেলে, শরীরে ফ্লুইড কমে গেলে বা হরমোনাল ইমব্যালেন্সের কারণেও এই সমস্যাটির সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়াও, উচ্চ রক্ত চাপের কিছু ওষুধ রয়েছে, যেগুলির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবেও এই রোগ টি হয়ে থাকে।
১. হৃদস্পন্দনের পরিবর্তন হওয়া (খুব জোড়ে, আস্তে বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দন)
২. নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
৩. প্রচুর ক্লান্তি অনুভব করা
৪. ঘাম হওয়া এবং মাথা ঘোরা
৫. গুরুতর ক্ষেত্রে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, যেটি সিনকোপ নামে পরিচিত
এই চিকিৎসায় ডাক্তার সাধারণত ওষুধের মাধ্যমে সমস্যা টি দুর করার চেষ্টা করে থাকেন যেমন ব্লাড থিনার, বিটা ব্লকার ইত্যাদি। এছাড়াও ডাক্তার জীবন শৈলীর পরিবর্তনের জন্যও নির্দেশ দিয়ে থাকেন। গুরুতর অবস্থার ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পেসমেকার বা ইমপ্ল্যানটেবল কার্ডিও ভারটার ডিফাইব্রিল্যেটর ব্যাবহার করে হৃদস্পন্দন কে নিয়ন্ত্রন করা হয়।
১. যে সমস্ত ব্যক্তির উচ্চ রক্ত চাপ বা কোলেস্টেরোলের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য এগুলি নর্মাল প্যারামিটারের মধ্যে ধরে রাখা প্রয়োজন।
২. ধূমপান বর্জন
৩. হার্ট হেলদি ডায়েট মেনে চলা
৪. প্রতিদিন শরীরচর্চা করা
৫. শরীরের ওজন বেশি হলে সেটি নিয়ন্ত্রণ করা
একজন সুস্থ মানব দেহে ৪ টি ভালভ থাকে, বাই কাস্পিড, ট্রাই কাস্পিড, পালমোনারি, ও এ্যওর্টিক। এই ভালভ গুলি রক্ত প্রবাহ কে একই দিকে হতে এবং হার্টে ফিরে না আসতে সাহায্য করে। হার্ট ভালভ ডিজিজের ক্ষেত্রে এই ভালভ গুলির স্বাভাবিক কার্য বন্ধ হয়ে যায় এবং সঠিক দিকে রক্ত প্রবাহ ব্যাহত হয়।
হার্ট ভালভ ডিজিজের বেশ কিছু কারণ রয়েছে তার মধ্যে সব থেকে প্রচলিত কারণ গুলি হলো জন্মগত ত্রুটি। অনেক মানুষের ক্ষেত্রে জন্মের সময় হার্ট ভালভ পুরো পুরি গঠন হয় না, সেক্ষেত্রে এই সমস্যা দেখা যায়। এছাড়াও হার্ট এ্যাটাক হলে বা অন্যান্য হার্টের সমস্যা থাকলে সেখান থেকেও এই রোগটি ছড়িয়ে পড়ে। আর একটি প্রচলিত কারণ হলো হার্টের মধ্যে সংক্রমণ ঘটা।
এই রোগের সাধারণ কিছু উপসর্গ হলো
১. সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়া এবং কিছু কাজ করার পরেই দুর্বলতা অনুভব করা
২. বুক ধড়ফড় করা
৩. অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন
৪. কাজ করলে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, এমনকি অনেক সময় শুয়ে থাকলেও নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
৫. পেট, পা ইত্যাদি অংশ ফুলে যাওয়া
৬. কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে মাথা ঘোরা এবং অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণও দেখা গেছে।
এই রোগের চিকিৎসা কিভাবে হবে সেটি সম্পূর্ণ নির্ভর করে রোগটি কতটা গুরুতর অবস্থা ধারণ করেছে তার ওপর। গুরুতর অবস্থায় ডাক্তার অস্ত্র প্রচারের মাধ্যমে ভালভ প্রতি স্থাপন করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। রোগটি খুব গুরুতর না হলে ওষুধ এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমেই রোগী কে সুস্থ করে তোলা যায়।
যদি জন্মগত সমস্যা না হয় তাহলে
১. একটি সাস্থ্য কর জীবন যাপন, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত শরীরচর্চা এই রোগটিকে থেকে আপনাকে দূরে রাখতে পারে।
২. ধূমপান এবং মদ্যপান বর্জন অবশ্যই প্রয়োজন।
৩. এছাড়াও অতিরিক্ত মানসিক চাপ থেকেও এই ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়, তাই অবশ্যই স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট করার দিকে নজর দিতে হবে।
হৃদ যন্ত্রের এই সমস্যা তখনই দেখা যায় যখন এটি সঠিক ভাবে ব্লাড পাম্প করতে পারেনা। ফলে, শরীরে রক্তপ্রবাহ কম হতে থাকে। এটি খুবই গুরুতর একটি সমস্যা এবং প্রাণহানির সম্ভাবনা খুব বেশি। হার্ট ফেলিওর এর লক্ষণ দেখা গেলে তৎক্ষণাৎ রোগী কে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত।
হার্ট ফেলিওরের অনেক গুলি কারণ রয়েছে। প্রথম কারণ হলো অতিরিক্ত রক্ত চাপ। এছাড়াও ,হৃৎপিণ্ডের মধ্যে ছিদ্র থাকলে সেখান থেকেও হার্ট ফেল করার সম্ভাবনা রয়েছে। অনেকসময়, ফ্যাট বা অবাঞ্ছিত বস্তু জমে যাওয়ার ফলে রক্তবাহিকা গুলির সংকীর্ণতা ও হার্ট ফেলিওর এর মত প্রাণঘাতী সমস্যা সৃষ্টি করে। এছাড়াও মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন, ফুসফুসে রক্ত জমে যাওয়া, অবেগজনিত চাপ এবং কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে হার্ট ফেলিওর হতে পারে।
নিম্নে উল্লিখিত লক্ষণ গুলি দেখা গেলে তৎক্ষণাৎ রোগী কে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত।
১. শ্বাসকষ্ট এবং বুকে ব্যাথা অনুভব করা হার্ট ফেলিওর এর প্রথম লক্ষণ
২. রোগীর মধ্যে উদ্বিগ্নতা এবং মাথা ব্যাথা লক্ষ্য করা যায়
৩. বুক ধড়ফড় করা এবং হৃদস্পন্দনের গতি বৃদ্ধি পাওয়া
৪. বার বার মূত্র ত্যাগ করার অনুভূতি হওয়া
প্রধানত চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন প্রকারের ওষুধ ব্যাবহার করা হয়ে থাকে যেমন ইন্ট্রা ভেনাস ডায়ইউরেটিকস। এছাড়াও এঞ্জিওটেন্সিন কনভার্টিং এনজাইম ইনহিবিটর, এঞ্জিওটেন্সিন ২ রিসেপ্টর ব্লকার ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। মেডিসিন ছাড়াও, রোগীর শ্বাসকষ্টের সমস্যা দূর করার জন্য অক্সিজেন দিতে হয়। কিছু কিছু গুরুতর অবস্থায় অস্ত্র প্রচার ও করতে হতে পারে।
১. সাস্থ্যকর জীবন শৈলী মেনে চলা
২. সঠিক খাদ্যভাস এবং শরীর চর্চার অভ্যাস গড়ে তোলা
৩. ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো রকম ওষুধ না খাওয়া
৪. হার্ট সুস্থ রাখতে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা
হার্টের সমস্যা শুধু মাত্র বয়সকালে নয়, অল্প বয়সেও হতে পারে যদি সেটি জন্ম গত কোনো ত্রুটি হয়, এটিই কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ নামে পরিচিত। খুব পরিচিত কিছু জন্মগত হার্টের ত্রুটি হলো হৃৎপিণ্ডের প্রধান ধমনী ও শীরার সংকীর্ণ করন, হৃৎপিণ্ডের সেপটার ওয়ালের মধ্যে ফুটো ইত্যাদি
এই রোগটি হওয়ার সব থেকে প্রাথমিক কারণ হলো গর্ভাবস্থায় কোনো জটিলতা। ভ্রূণের বিকাশের সময় ঠিকভাবে গর্ভবতী মহিলার যত্ন না নেওয়া এবং বিশৃঙ্খল জীবনযাপন এই সমস্যার সূত্রপাত ঘটায়। বিশৃঙ্খল জীবনযাপনের উদাহরণ যেমন গর্ভাবস্থায় ধূমপান বা মদ্যপান করা, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ঔষধ খাওয়া ইত্যাদি। এছাড়াও পরিবেশগত কারণেও এই সমস্যা টির সৃষ্টি হতে পারে। পারিবারিক ইতিহাস এই রোগের সৃষ্টি তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। লক্ষ্য করা গেছে কোনো কোনো শিশুর ক্ষেত্রে ত্রুটিপূর্ণ জিন এই রোগের সম্ভাবনা বহু অংশে বাড়িয়ে দেয়।
যদি সমস্যা খুব জটিল না হয় সেক্ষেত্রে শিশু অবস্থায় লক্ষণ বোঝা যায় না বললেই চলে কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় কিছু লক্ষণ দেখা যায় যেমন
১. শ্বাস প্রশ্বাস নিতে অসুবিধা, ব্যায়াম করতে অসুবিধা, একটু কাজ করলেই ক্লান্তি ইত্যাদি।
রোগটি জটিল হলে যে লক্ষণ গুলি দেখা যায় তা হলো
২. বুকের মধ্যে যন্ত্রণা বা চাপ ধরার অনুভূতি
৩. অতিরিক্ত ঘাম হওয়া
৪. অতি দ্রুত শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়া বা শ্বাস নিতে অসুবিধা যেটি ডিস্পনিয়া নামেও পরিচিত
৫. শিশুদের মধ্যে খিদের অভাব এবং বয়সের তুলনায় সঠিক বৃদ্ধি না হওয়া
৬. গুরুতর ক্ষেত্রে ঠোঁট, হাতের নখ, স্কিন ইত্যাদি নীল হয়ে যাওয়া, যেটি মেডিক্যালের ভাষায় সায়ানোসিস নামে পরিচিত।
এই রোগের চিকিৎসা নির্ভর করে থাকে রোগটির তীব্রতা অনুযায়ী। যদি জন্মগত ত্রুটি স্বাভাবিক জীবনে খুব সামান্য বা একদমই সমস্যা তৈরি না করে সেক্ষেত্রে চিকিৎসার প্রয়োজন পরে না এবং ওষুধের সাহায্যে উপসর্গ গুলিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। যদি সমস্যা গুরুতর হয় সেক্ষেত্রে সমস্যার ধরন অনুযায়ী ওপেন হার্ট সার্জারী বা মিনিমাল ইনভেসিভ সার্জারী করা হয়ে থাকে। আর যদি সমস্যাটি অস্ত্রপ্রচারের মাধ্যমেও সমাধান না করা যায় সেক্ষেত্রে হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট করতে হয়।
১. এই রোগটি জেনেটিক হলে সেক্ষেত্রে কিছু করার থাকে না
২. গর্ভাবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ না খাওয়া
৩.গর্ভাবস্থায় ধূমপান, মদ্যপান ও অন্যান্য নেশার দ্রব্য থেকে দূরে থাকা
পেরিকার্ডিয়াম হলো হৃৎপিণ্ডের একটি আস্তরণ এবং হৃৎপিণ্ডের এই অংশ টির মধ্যে প্রদাহ হলে সেটিকে পেরিকার্ডিয়াল ডিজিজ বা পেরিকার্ডিটিস বলা হয়। এই রোগে পেরিকার্ডিয়ামের মধ্যে অতিরিক্ত তরল পদার্থ জমা হতে থাকে যেটি থেকে প্রদাহ শুরু হয়। প্রাপ্তবয়স্ক দের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সুযোগ সব থেকে বেশি এবং শিশুদের মধ্যে এই রোগের সম্ভাবনা বেশ কম।
এই রোগটি হওয়ার কোনো নির্দিষ্ট কারণ নেই তবে বেশ কিছু সম্ভাব্য কারণ রয়েছে। যেমন ব্যাকটেরিয়াল, ফাঙ্গাল বা ভাইরাল সংক্রমণ এই রোগটি সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও যে সমস্ত ব্যক্তি ক্যান্সারে ভুগছেন, তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা টি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। কিডনির সমস্যা থাকলেও সেখান থেকে পেরিকার্ডিটিস রোগটি হতে পারে। আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ যা এই রোগটির সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে তা হলো এইচ আই ভি সংক্রমণ। টিউবার কুলোসিসের জটিলতা থেকেও এই সমস্যাটির সৃষ্টি হতে পারে
১. এই রোগের প্রথম লক্ষণ হলো বুকে তীব্র ব্যাথা যেটি শ্বাস নেওয়ার সময়, কাশির সময় আরো বেড়ে যায়
২. গলা, কাঁধ, পিঠ ইত্যাদি জায়গায় ব্যাথা
৩. পেট, পায়ের পাতা, পা, ইত্যাদি জায়গা ফুলে যাওয়া
৪. শ্বাস প্রশ্বাস নিতে অসুবিধা বিশেষ করে শুয়ে থাকার সময়
৫. হৃদস্পন্দনের গতি অনিয়মিত হয়ে যাওয়া, যেটি অ্যারিথমিয়া নামেও পরিচিত
এই রোগের চিকিৎসায় প্রথমে সংক্রমণ টি ঠিক করার জন্য ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। সংক্রমণ টি ঠিক কি থেকে হয়েছে তার ওপর নির্ভর করে চিকিৎসক ওষুধ নির্ধারণ করেন। এছাড়াও শরীর থেকে তরল পদার্থের জমে যাওয়া কমানোর জন্য ডাই ইউরেটিকস ও অন্যান্য ওষুধের ব্যাবহার বহুল প্রচলিত। এই রোগের আরো একটি খুবই গুরুত্বপুর্ণ চিকিৎসা পদ্ধতি হলো পেরিকার্ডিও স্টেনেসিস, যেটিতে পেরিকার্ডিয়ামের মধ্যে জমে থাকা তরল বের করে নেওয়া হয়। রোগটি খুবই গুরুতর অবস্থা ধারণ করলে সেক্ষেত্রে অস্ত্রপ্রচার করে রোগটিকে সারিয়ে তোলা হয়।
১. সতর্কতার মাধ্যমে এই রোগটি থেকে নিজেকে দূরে রাখা যায় না তবে কিছু উপায় রয়েছে যেগুলি জটিলতা কমাতে এবং কিছু ক্ষেত্রে এই রোগটি থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে।
২. চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা এবং ফলো আপ রোগটির জটিলতা এবং পরবর্তী কালে আবার হওয়া থেকে আটকাবে।
এটি এমন একটি শারীরিক সমস্যা যেখানে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসার প্রয়োজন হয়, নাহলে সেটি প্রাণঘাতী হতে পারে। হৃৎপিন্ডে রক্ত প্রবাহ কারী ধমনীর মধ্যে প্ল্যাক থেকে হৃদযন্ত্র হটাৎ করে বিকল হয়ে যায় এবং এই সমস্যা টির সৃষ্টি করে।
এই রোগের অনেকগুলি কারণ রয়েছে তারমধ্যে অস্বাস্থ্যকর জীবন যাত্রা এই রোগের সব থেকে বড় কারন। বর্তমান যুগের অলস জীবনযাত্রা এবং তার সাথে অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড খাওয়ার প্রবণতা ওবেসিটি বাড়ায় আর তার সাথে বাড়ায় উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরলের মতো সমস্যা যা পরবর্তীকালে হার্ট এ্যাটাক সৃষ্টি করে। এছাড়াও খাবারের মধ্যে অতিরিক্ত স্যাচুরেটেড ফ্যাট, ট্রান্স ফ্যাটের আধিক্য অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস বা হার্টের ধমনীর মধ্যে প্ল্যাক তৈরি করে, যেটিও হার্ট অ্যাটাক এর কারণ হতে পারে।
১. এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হলো বুকের মধ্যে চাপ অনুভব করা এবং বুকের বাঁদিকে তীব্র ব্যথা, যেটি কাঁধ, বা হাত, চোয়াল ইত্যাদি জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে
২. অনেকসময় এই রোগটির লক্ষণ আগে থেকেও বোঝা যায় যেমন মাঝে মাঝে বুকে ব্যাথা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি
৩. এছাড়াও বমি করা এই রোগের আরো একটি গুরুত্বপূর্ন লক্ষণ, যেটিকে অনেকেই অ্যাসিডিটির সমস্যা বলে এড়িয়ে যান
৪. রক্ত চাপ স্থির থাকে না এবং সেটি কম বেশী হতে থেকে
৫. শ্বাস কষ্ট এবং তার সাথে অস্বস্তির অনুভূতি
৬. স্কিন এর রঙের পরিবর্তন এবং বিবর্ণ আকার ধারণ করা
রোগী কে ভর্তি করার সাথে সাথেই চিকিৎসক রোগী কে সাময়িক স্থিতিশীল করার জন্য ব্লাড থিনার, অ্যান্টি কোয়াগুল্যান্ট, অক্সিজেন ইত্যাদি ব্যাবহার করে থাকেন। গুরুতর ক্ষেত্রে অস্ত্রপ্রচার করতে হয়। এই রোগের জন্য চিকিৎসক করোনারি অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি ও করোনারি আর্টারি বাইপাস এই দুই ধরনের অস্ত্রপ্রচার করে থাকেন। এগুলির ফলে হৃৎপিন্ডে রক্ত সঞ্চালন পুনরায় স্থিতিশীল হয় এবং রোগী ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে।
১. এই রোগটি থেকে খুব সহজেই নিজেকে বাঁচানো যায় একটি স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনের মাধ্যমে
২. একটি সঠিক ওজন ধরে রাখা
৩. স্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া এবং শরীর চর্চা করার অভ্যেস গড়ে তোলা, বিশেষ করে যে সমস্ত ব্যায়াম শরীরে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে
৪. ধূমপান, মধ্যাপান ও অন্যান্য নেশার বস্তু থেকে দূরে থাকা
এই রোগটি সৃষ্টি হয় রিউম্যাটিক ফিভার বা বাত জ্বরের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে। এটি হৃৎপিণ্ডের মধ্যে স্থায়ী সমস্যার সৃষ্টি করে, যা প্রাণঘাতী হতে পারে। এছাড়াও হার্ট ফেইলিওর, হার্ট ভালভের সমস্যা, হৃৎপিণ্ডের অভ্যন্তরীন আস্তরণের সংক্রমণ ইত্যাদিও এই সমস্যাটির সঙ্গে হতে পারে।
রিউম্যাটিক ফিভার হওয়ার পরবর্তীকালে এই রোগের লক্ষণ গুলি প্রকাশিত হয়, বিশেষ করে যখন রিউম্যাটিক ফিভারের সঠিক চিকিৎসা হয় না। এছাড়াও এই রোগে একাধিক বার আক্রান্ত হলেও সেখান থেকে রিউম্যাটিক হার্ট ডিজিজ হতে পারে। সক্রমনের ফলে হার্ট ও অন্যান্য জয়েন্ট গুলিকে প্রদাহ দেখা যায়। প্রদাহের ফলে হার্টের ভালভ গুলিতে স্থায়ী ক্ষত দেখা যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে হার্ট ভালভ গুলিতে সংকোচন ঘটে বা ফুটো হয়ে যেতে পারে। তবে এই সমস্যাগুলি একদিনে হয় না, বার বার সংক্রমণ হলে সেখান থেকে এই রোগটি তৈরি হয়, যেটি থেকে শেষ পর্যন্ত হার্ট ফেল হতে পারে।
১. শ্বাস প্রশ্বাস নিতে অসুবিধা বিশেষ করে শুয়ে থাকা অবস্থায় এবং অস্বস্তির অনুভূতি
২. বুকে ব্যাথা
৩. মুখ, হাত, পা ইত্যাদি জায়গার পেশী গুলির মধ্যে অনিয়ন্ত্রিত নড়াচড়ার লক্ষণ
৪. ত্বক
৫. হাঁটু, গোড়ালি ইত্যাদি জয়েন্ট গুলি তে ব্যাথা
৬. দুর্বলতা
এই রোগটির সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা হলো বাত জ্বর হলে সেটিকে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা। চিকিৎসক সংক্রমণ ঠিক করার জন্য অ্যান্টি বায়োটিক ওষুধ ব্যাবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এছাড়াও অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ গুলি প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। যে সমস্ত ব্যক্তির এই বাত জ্বর হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে বা আগে এই সংক্রমণ টি হয়েছে তাদের নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হয়। এছাড়াও হার্ট ভালভের ক্ষত সারাতে হার্ট ভালভ সার্জারী করা হয়ে থাকে। এই রোগের চিকিৎসায় বেলুন সার্জারীর ভূমিকাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
১. এই রোগটি থেকে নিজেকে বাঁচাতে হলে সবার আগে রিউম্যাটিক ফিভার থেকে নিজেকে বাঁচাতে হবে।
২. বাত জ্বর হলে অবশ্যই চিকিৎসকের সমস্ত নির্দেশ মেনে চিকিৎসা এবং ফলো আপ করা প্রয়োজন
৩. হার্ট ফেইলিওরের কোনো লক্ষণ দেখলে অবশ্যই সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন